একটি রাজনীতির শব্দকোষ [ Glossary of Politics ] উন্নয়ন করা হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মী, লেখক সহ সকলের সুবিধার্থে এই শব্দকোষটি কাজে লাগবে আশা করা যায়। যদি আপনার কোন প্রত্যাশিত শব্দ আপনি খুঁজে না পা, তবে আমাদের জানিয়ে বাধিত করবেন। আমরা খুব দ্রুত সেই শব্দটি যোগ করবো। এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান। রাজনীতি বিষয়ক নতুন নতুন শব্দ ও তার অর্থ জানতে নিয়মিত ভিজিট করুন।
Table of Contents
রাজনীতির শব্দকোষ
অ দিয়ে সকল রাজনৈতিক শব্দ
অক্ষশক্তি [ Axis Power ]
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা জার্মানি, ইতালি ও জাপানের ঐক্যজোট। ১৯৩৬ সালে ইতালি আবিসিনিয়া আক্রমণ করলে স্পেন ও জার্মানি ব্যতীত ইউরোপের অন্যান্য সকল রাষ্ট্রই ইতালির বিরোধিতা করে। এই সময় থেকেই ইতালি ও জার্মানির ঐক্য ও সহযোগিতা আরম্ভ হয়। এই ঐক্য ‘রোম-বার্লিন অক্ষশক্তি’ নামে অভিহিত হয়। পরবর্তীকালে জাপানও এই জোটে যোগদান করে।
অছি পরিষদ [ Trusteeship Council ]
আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার বঞ্চিত যে সমস্ত জাতি বা অঞ্চলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জাতিসংঘের ওপর অর্পিত, সে-সমস্ত জাতি বা অঞ্চলের দেশের রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং যাতে তারা যথাসম্ভব সত্বরতার সঙ্গে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, তার জন্য কাজ করাই অছি পরিষদের দায়িত্ব। অছি পরিষদ জাতিসংঘের । গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ।
অজ্ঞেয়তাবাদ :
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুকে একদিন জানা যেতে পারে, এই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে অস্বীকার করার নামই হল অজ্ঞেয়তাবাদ (Agnosticism) | অজ্ঞেয়তাবাদীদের মতে বহু কিছুই চিরকাল মানুষের অজ্ঞাত থেকে যাবে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলি (১৮২৫-৯৫) ‘অজ্ঞেয়তাবাদ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করলেও গ্রিক দর্শনে এই মতবাদের সন্ধান মেলে।
গ্রিক দার্শনিক পাইরো (খ্রিস্টপূর্ব ৩৬৫-২৭৫) বলেন যে, ‘বস্তুত, কিছুই জানার আমাদের সাধ্য নেই। সুতরাং বস্তুজগৎ নিয়ে ভেবে কোনো লাভ নেই। খামোকা অশান্তি। তবে অজ্ঞেয়তাবাদকে একটি দার্শনিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর প্রথম প্রয়াস পান ডেভিড হিউম (১৭১১-৭৬) ও ইমান্যুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪)। কান্ট বলেন যে, যুক্তিমাত্রই দ্বন্দ্ব বা বিরোধিতার দ্বারা বিভক্ত।
এই প্রহেলিকার কবল থেকে মুক্তি পেতে হলে বুঝতে হবে যে, ‘নিজ সত্তায় বস্তু (Thing in itself)’ এবং ‘দৃশ্য (Phenomenon)’ এক নয়; নিজ সত্তায় বস্তু’ বস্তুত অজ্ঞেয়। এভাবে অজ্ঞেয়তাবাদ বিজ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়ার প্রয়াস পায়; যুক্তিবাদকে বর্জন করতে শেখায় এবং বস্তুর, বিশেষত সমাজের বস্তুগত নিয়মসমূহ থেকে মানুষের দৃষ্টি ও চেতনাকে ফিরিয়ে নেয়।
অতিমানব [ Superman ]
জার্মান দার্শনিক নিতসেই প্রথম ‘অতিমানব’-এর কল্পনা করেন। তাঁর মতে মানুষ নৈতিক শক্তি ও প্রাণশক্তির চরম বিকাশসাধনের মাধ্যমে অতিমানবে পরিণত হতে পারে। আত্মশক্তি বৃদ্ধি ও অগ্রগতিই হল মানুষের অতিমানব হওয়ার সাধনার পদ্ধতি ও লক্ষ্য। অনেকের মতে, এই মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েই ইতালিতে ফ্যাসিবাদী বেনিটো মুসোলিনি এবং জার্মানিতে হিটলারের অভ্যুদয় ঘটে। অবশ্য একথা স্বীকার করতেই হবে যে, নিতসের দর্শনের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল মানুষের চূড়ান্ত ও কল্যাণকর গঠন ও বিকাশ। ধ্বংসাত্মক বা অকল্যাণকর অতিমানব সৃষ্টি তাঁর চিন্তায় ছিল। না।
অতিশুদ্ধচারিতা:
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা গোষ্টির মধ্যে শতকরা একশো ভাগ সৎ গুণাবলি দাবি করার প্রবণতা। অনেকে মনে করেন যে, সমাজ পরিবর্তন বা কোন বৃহৎ কাজের নেতৃত্বদানকারী নেতা বা কর্মীদের মধ্যে দোষ-ত্রুটির লেশমাত্রও থাকা উচিৎ নয়। অতিশুদ্ধাচারিতার নেতিবাচক হল এই যে, দোষ-গুণ-সমন্বিত মানবসমাজে ১০০% শুদ্ধ মানুষ পাওয়া কার্যত প্রায় অসম্ভব।
দোষ-গুণের ব্যাপারটা অনেকটা আপেক্ষিকও বৈকী। ফলে, অতিশুদ্ধাচারীরা বৃহৎ কোনো সংগঠন গড়ে তুলতে প্রায়শই অসামর্থ্য হয়। যার পরিনামে তারা হতাশগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অতিশুদ্ধচারিতার সমালোচকরা মনে করেন যে, সর্বগুণান্বিত মানুষ নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ; কিন্তু সেরূপ পাওয়া না গেলে, যাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ভালো বা মহৎ কাজটি সম্পাদনের অনুকুল গুণাবলির ভাগ বেশি, তাঁদেরকেই নেতা কর্মী হিসেবে করা যায়। এ ধরণের কর্মীদের ছোটখাটো দোষগুলোকে বড় করে না দেখে, সেগুলোকে ধীরে ধীরে সংশোধন চেষ্টা করাই বরং বিধেয়।
অদৃশ্য রফতানি [ Invisible Export]:
একটি দেশ সরাসরি পণ্য রফতানির মাধ্যমে যে-আয় করে, তা হল প্রত্যক্ষ রফতানিলব্ধ আয়। কিন্তু ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম, বৈদেশিক ঋণের সুদ, বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ বাবদ আয়, ব্যাংক, শিপিং সার্ভিস ইত্যাদি বাবদ আয়, ট্যুরিজম বাবদ আয়ই প্রভৃতি পণ্য রফতানি-বহুর্ভূত আয়ই হল অদৃশ্য রফতানি বাবদ আয়।
অদ্বৈতবাদ [ Monism ]:
একটি পদার্থ (element) বা একটি সচেতন মূল উৎস থেকেই যাবতীয় বস্তুর উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে—এই মতবাদ।
অধিবিদ্যা [ Metaphysics ]:
এই দার্শনিক মতবাদ অনুযায়ী বস্তু ও বস্তু সম্পর্কে ধারণা পরস্পরবিচ্ছিন্ন ব্যাপার; ধারণা ভাব আসে আগে, বস্তু আসে পরে এবং ভাবের সঙ্গে বস্তু সম্পর্কহীন। Metaphysics শব্দটির শাব্দিক অর্থ ‘বস্তু-জগতের ঊর্ধ্বে’, অর্থাৎ বাস্তব ঊর্ধ্বের জগৎ সম্পর্কে আলোচনা। অধিবিদ্যা কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। খ্রিস্টপূর্ব সালে অ্যারিস্টটলের রচনায় দেহাতীত বস্তু অর্থাৎ যা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের ঊর্ধ্বে, তা বোঝানোর প্রথম শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
অনাক্রমণ চুক্তি [ Non-aggression Pact ]:
দুই বা ততোধিক দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ না বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধের নিষ্পত্তি করবে—এই মর্মে সম্পাদিত চুক্তি।
অনাস্থা প্রস্তাব [Vote of No-confidence]:
সাধারণত কোন আইন পরিষদের সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে যে-প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তাকেই বলে অনাস্থা প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ বা দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পড়লে সরকারের পতন ঘটাই নিয়ম। কোন কোন দেশে রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ করতে হলে শুধুমাত্র সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হলেই চলে না, দুই-তৃতীয়াংশ বা তিন চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন সংগঠনেও কমিটি বা কোন কর্মকর্তা-বিশেষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের ব্যবস্থা থাকতে দেখা যায়।
অনুদান [ Grant-in-Aid]:
কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের রাজস্ব-ঘাটতি পূরণের উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা সরকারের তরফ থেকে যে-সাহায্য প্রদান করা হয় তাকেই বলে অনুদান। অনুরূপভাবে, ধনী দেশসমূহ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থ-সংস্থাসমূহ অনুন্নত বিশ্বের সদস্যদেরও অনুদান দিয়ে থাকে।
অনুন্নত বিশ্ব :
এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার যেসব দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক থেকে বিশ্বের সাধারণ অগ্রগতির স্তরের তুলনায় পিছিয়ে আছে, সেসব দেশকেই সমন্বিতভাবে অনুন্নত বিশ্ব বলে অভিহিত করা হয়। উৎপাদনযন্ত্র ও প্রক্রিয়ার বিচারে এসব দেশ পশ্চাৎপদ এবং শোষণ, দারিদ্র্য ও পরনির্ভরতা এসব দেশের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এসব দেশের প্রায় সবকটিই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় পর্যন্ত কোনো-না-কোনো বিদেশী শক্তির উপনিবেশ ছিল।
সামাজিক-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও এসব দেশের অপর প্রধান বৈশিষ্ট্য। এসব দেশের সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য ক্রমবর্ধমান। বস্তুত, পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহ তাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল সংগ্রহ এবং শিল্পোৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের বাজার হিসেবে ব্যবহার করার জন্যে এসব দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক অনিশ্চয়তা, প্রযুক্তিগত পশ্চাৎপদতা, শোষণ, দারিদ্র্য ও পরনির্ভরতাকে বিভিন্ন কৌশলে টিকিয়ে রাখার প্রয়াস পায়।
এসব দেশকে কেউ স্বল্পোন্নত দেশ (Less Developed Countries বা LDC. কেউবা উন্নয়নশীল দেশ (Developing Countries) নামে অভিহিত করেন। এই অনুন্নত দেশসমূহ ‘তৃতীয় বিশ্ব’-এরও অন্তর্গত বটে, কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের সব দেশের উন্নয়নের পর্যায় একইরূপ নয়।
যেমন : তৈলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ, ভারত, চীন, কোরিয়া ইত্যাদিকেও তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে বিবেচনা করা হলেও, কার্যত, এসব দেশের অনেকেই সম্পদশালী এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকেও অন্যান্য দরিদ্র-অনুন্নত দেশসমূহের তুলনায় অনেক অগ্রসর। তাই অনুন্নত দেশসমূহ এবং তৃতীয় বিশ্ব হুবহু সমার্থক ব্যাপার নয়।
অনুপ্রবেশ [ Infiltration ] :
কোনো দেশ বা সংগঠনের অভ্যন্তরে শত্রুপক্ষ অথবা ভিন্ন দেশ বা সংগঠনের ব্যক্তি বা চরদের গোপনভাবে ঢুকে পড়াকেই বলে অনুপ্রবেশ। অন্তর্ভুক্তিকরণ বা গ্রাস Annexation. অন্য রাষ্ট্রের মালিকানাধীন বা কোনো রাষ্ট্রেরই মালিকানাধীন নয় এমন এলাকা জবরদখল করে নিজ এলাকাভুক্ত করে নেয়ার নামই গ্রাস।
এরূপ গ্রাস বা অন্তর্ভুক্তির সময় মূল মালিক-রাষ্ট্রের কোনো অনুমতি গ্রহণ করা হয় না। এরূপ গ্রাসের বৈশিষ্ট্য হল এই যে, গ্রাসকৃত এলাকাকে গ্রাসকারী রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করা হয়। গ্রাস যুদ্ধকালীন সামরিক দখল বা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানাধীন অথবা অনুরূপ অন্তর্বর্তীকালীন বা মধ্যবর্তী কোনো অবস্থা নয় ।
অপরাধী প্রত্যার্পণ [ Extradition ] :
এর অর্থ হল কোনো ব্যক্তি যদি কোনো রাষ্ট্রে অপরাধ করে অন্য রাষ্ট্রে পালিয়ে যায়, তা হলে দ্বিতীয় রাষ্ট্র কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রথম রাষ্ট্রের হাতে হস্তান্তর। এ ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইন না থাকায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে প্রত্যার্পণ চুক্তি সম্পাদিত হয়। এসব চুক্তি অনুযায়ী রাজনৈতিক অপরাধী ছাড়াও অন্যান্য মারাত্মক অপরাধীদের প্রত্যার্পণের রীতি প্রচলিত আছে।
অপারেশন ঈগল [ Operation Eagle ] :
১৯৪০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ-যাবৎকালীন ইতিহাসের সর্বাধিকসংখ্যক বিমানের বহর নিয়ে হিটলারের নাৎসিবাহিনী ইংল্যান্ডের ওপর আক্রমণ চালায় এবং বেপরোয়া বোমাবর্ষণ করে। এই বিমান হামলাই ইতিহাসে অপারেশন ঈগল নামে খ্যাত। শোনা যায়, হিটলারের বিমান বাহিনী (লেফট্ ভাফে)-র প্রধান মার্শাল গোয়েরিং স্বয়ং এই অভিযান পরিচালনা করেন।
আরও শোনা যায় যে, হিটলার ১৯৪০ সালের ক্রিসমাস (২৫ ডিসেম্বর) দিবসের বৈকালিক চা বাকিংহাম প্রাসাদেই গ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক হাজার বিমানের এই আক্রমণ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, হিটলারের স্বপ্ন ভেঙে যায় এবং ফলে উইনস্টন চার্চিল ব্রিটিশ জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে মূর্ত হয়ে। ওঠেন।
অপারেশন জোনাথন [ Operation Jonathon] :
সত্তরের দশকে তেলআবিব থেকে প্যারিসগামী এয়ার ফ্রান্সের একখানি বিমানকে পি. এল. ও. এবং পশ্চিম জার্মানির বাদের-মেইনহফ-এর সন্ত্রাসবাদীরা ২৫৬ জন যাত্রীসহ উগান্ডার এন্টেবি বিমানবন্দরে অবতরণ করায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের জেনারেল হেড কোয়ার্টার্স ইউনিটের কমান্ডোবাহিনী অতর্কিত পালটা হামলা চালিয়ে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে বিমানদস্যুদের হত্যা করে এবং যাত্রী ও বিমানকে মুক্ত করে ফেরত নিয়ে আসে। ছিনতাই মোকাবেলার ইতিহাসে এই বিস্ময়কর ঘটনাই ‘অপারেশন জোনাথন’ নামে খ্যাত।
অপারেশন জ্যাকপট [ Operation Jackpot ] :
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অপারেশনসমূহের সম্মিলিত সাঙ্কেতিক নাম ছিল অপারেশন জ্যাকপট। ভারতীয় সমরবিদরাই এই নামকরণ করেছিলেন। এমনিতে জ্যাকপট শব্দটির অর্থ হচ্ছে এমন পাত্রবিশেষ যার মধ্যে সৌভাগ্য সঞ্চিত হতে থাকে।
অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম [ Operation Desert Storm ] :
১৯৯১ সালে ইরাক আকস্মিকভাবে কুয়েত দখল করে নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কুয়েত থেকে ইরাকি বাহিনীকে হটানোর জন্যে যে-সামরিক অভিযান শুরু করে, সেটারই কোড নাম ছিল অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম বা অপারশন মরুঝড়। এই অপারেশনের নামে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মার্কিন কর্তৃত্বাধীনে বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এবং ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও এসব বাহিনী বহাল রাখা হয়।
অপারেশন বারবারোসা [ Operation Barbarossa ] :
সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে হিটলার যে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন, তারই সাঙ্কেতিক নাম ছিল। অপারেশন বারবারোসা। সম্ভবত এটাই ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও বৃহত্তম স্থলযুদ্ধ ।
অপারেশন ব্লু স্টার [ Operation Blue Star ]:
১৯৪৭ সাল থেকেই ভারতীয় পাঞ্জাবের শিখরা স্বায়ত্তশাসনের দাবি করে আসছে। ১৯৭৩ সালের পর শিখদের চরমপন্থি নেতা জর্নাল সিং ভিদ্রেনওয়ালের নেতৃত্বে শিখরা ‘স্বাধীন খালিস্তান’-এর জন্যে আন্দোলন শুরু করে। ১৯৮২ সালে ভিদ্রেনওয়ালে তাঁর সমর্থকদের নিয়ে শিখদের প্রধান ধর্মপীঠ অমৃতসরস্থ স্বর্ণমন্দিরে আশ্রয় নিয়ে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে থাকেন।
১৯৮৪ সলের ৫-৭ জুন ভারতীয় সেনাবাহিনী স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালায় এবং প্রচও নৃশংসতার সাথে বিদ্রোহীদের দমন করে। শিখদের পবিত্র ‘আকাল তখত্’ রক্ষা করতে গিয়ে অসংখ্য শিখ প্রাণ হারায়। স্বয়ং জর্নেল সিং ভিদ্রেনওয়ালেকে হত্যা করা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই অভিযানেরই কোড নাম ছিল অপারেশন ব্লু স্টার। ভিদ্রেনওয়ালের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে শিখরা ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকেই গুলি করে হত্যা করে।
১৯৮৫ সালের ২৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সাথে মধ্যপন্থি শিখ নেতা সন্ত হরচাঁদ সিং লাঙ্গোয়ালের এক চুক্তি হয়। চুক্তির ২৭ দিন পর (২০.৮.৮৫) লাঙ্গোয়াল আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। ফলে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে এবং স্বর্ণমন্দিরে চরমপন্থিরা পুনরায় ঘাঁটি গাড়ে। এমতাবস্থায় ৯-১৮ মে, ১৯৮৮ ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনী পুনরায় স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালিয়ে স্বর্ণমন্দিরকে মুক্ত করে। তবে শিখরা স্বাধীন খালিস্তানের দাবি কখনোই পরিত্যাগ করেনি।
অবচেতন [ Sub-Conscious]:
মানসিক অবস্থাকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : চেতন, অচেতন ও অবচেতন। চেতনতার আওতাভুক্ত হল সেসব বিষয়, চিন্তা ও উপলব্ধি, যেগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সাধারণভাবে অবগত এবং যেগুলোর ভিত্তিতে উক্ত ব্যক্তির সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমাদি সাধারণভাবে পরিচালিত হয়। অচেতনতার আওতাভুক্ত হল সে-সমস্ত বিষয়, চিন্তা ও উপলব্ধি, যেগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবগত নয় এবং তার সিদ্ধান্ত ও কার্যে যেগুলোর কোনো দৃশ্যমান প্রভাব নেই।
আর অবচেতনতার আওতাভুক্ত হল সে-সমস্ত বিষয়, চিন্তা ও উপলব্ধি, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মস্তিষ্ক-প্রক্রিয়ায় সঞ্চিত আছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেগুলো সম্পর্কে ঐ সময় পর্যন্ত সাধারণভাবে অবগত নয়। অবচেতন বিষয়, চিন্তা ও উপলব্ধি, বিশেষ অবস্থায় চেতনতার পর্যায়ে চলে আসতে পারে। আর অবচেতন প্রেক্ষিতসমূহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অজান্তেই তার সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে। এমতাবস্থায়, তার ঘোষিত বক্তব্য ও কার্যক্রমের তুলনায়, তার প্রকৃত কার্যক্রমকে অনেক সময়ই স্ববিরোধী মনে হতে পারে।
অবতারবাদ :
অনেকে মনে করেন যে, ভগবান বা সৃষ্টিকর্তা মানবকুলকে সঠিক পথে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে মানুষ বা অপর কোনো জাগতিক রূপ নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন যেমন : হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন যে, শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ প্রমুখ আসলে মনুষ্যরূপে স্বয়ং ভগবান। খ্রিস্টানরাও যীশুর অবতারত্বে (Incarnation) বিশ্বাস করেন। মানুষ বা জাগতিক কোনো প্রাণী বা বস্তুকে ভগবানরূপে কিংবা ভগবানের ন্যায় সকল দোষ-ত্রুটি-ভুল-ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে এবং সর্বজ্ঞ ও মহাক্ষমতাবান বলে বিবেচনা করাই হল অবতারবাদ।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও অনেক সময় দেখা যায় যে, কোনো নেতাবিশেষকে তাঁর অনুসারীরা অবতারের মতোই দোষ-ত্রুটি-ভুল-ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে বলে বিবেচনা করেন, তাঁর চিন্তা ও বক্তব্যকে অভ্রান্ত বলে জ্ঞান করেন এবং তাঁকে ও তাঁর আজ্ঞাকে অন্ধভাবে অনুসরণ করেন, ঠিক যেমনটি করা হয় অবতারের ক্ষেত্রে। এরূপ ক্ষেত্রে, নেতা সমষ্টির প্রতিনিধি না হয়ে, সমষ্টির ঊর্ধ্বে এক একক পরিচালক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। অনেক সময় নেতৃত্বের ব্যক্তিকরণের নামে এরূপ অবতাররূপী নেতৃত্ব চেপে বসে।
প্রথমত, এরূপ অযৌক্তিক নেতৃত্ব প্রায়শই জাতির বিপর্যয়ের কারণ হয়। দ্বিতীয়ত, এরূপ নেতৃত্ব কোনো সময়ে কোনো কারণে অপসৃত হয়ে গেলে, বিকল্প নেতৃত্বের অভাবে গোটা সাংগঠনিক বা রাষ্ট্রীয় কাঠামোও ধসে পড়তে পারে। অনুন্নত বিশ্বের রাজনীতিতে এই প্রবণতা প্রায়শই লক্ষ করা যায়।
অবমূল্যায়ন, মুদ্রার [ Devaluation ]:
এটা হল কোনো দেশের মুদ্রার মূল্য অন্য কোনো দেশের মুদ্রা বা মুদ্রা-ধাতু (স্বর্ণ, রৌপ্য ইত্যাদি)-এর তুলনায় হ্রাস করা। কোনো দেশে লেনদেনের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে বিরূপ অবস্থা দেখা দিলে, রফতানিকে উৎসাহিত করা এবং আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অবমূল্যায়নের ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের পণ্য বিদেশীরা কম দামে আমদানি করতে পারে; অপরদিকে বিদেশ থেকে উক্ত দেশে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেশি পড়ে।
বলাবাহুল্য, অবমূল্যায়ন সমস্যার কোনো স্বাভাবিক সমাধান নয়। বারংবার অবমূল্যায়ন করা হলে, বিদেশের কাছে অবমূল্যায়নকারী দেশের মুদ্রা সম্পর্কে আস্থাহানি ঘটে। তা ছাড়া অবমূল্যায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং আনুপাতিক হারে মানুষের আয় না বাড়লে মানুষের কষ্টও বৃদ্ধি পায়। শুধুমাত্র লেনদেনের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে মৌলিক ব্যত্যয় দেখা দিলেই মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা যেতে পারে।
অবরোধ [ Blockade ] :
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ইত্যাদির সাহায্যে শত্রুপক্ষ বা শত্রুদেশকে এমনভাবে ঘিরে রাখা যাতে ঐ শত্রুপক্ষ বাইরের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র, রসদ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধের উদ্দেশ্য শত্রুকে দুর্বল ও দিশেহারা করে তোলা কিংবা নতিস্বীকারে বাধ্য করা।
অবস্থান ধর্মঘট :
এরূপ ধর্মঘটে শ্রমিকরা কারখানা বা কর্মস্থল ত্যাগ করে যাওয়ার বদলে সেখানেই অবস্থান করে। কর্মস্থল ত্যাগ করলে মালিক বা কর্তৃপক্ষ নতুন শ্রমিক নিয়োগ করে কারখানা চালাতে পারে, এই আশঙ্কাতেই শ্রমিকরা অবস্থান ধর্মঘটের কৌশল অবলম্বন করে। ১৯৩৪ সালে পোল্যান্ডের কয়লাখনির শ্রমিকেরা দাবিপূরণের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট করে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত খনির মধ্যেই অবস্থান করে। এটাই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম অবস্থান ধর্মঘট। পরবর্তীকালে অবস্থান ধর্মঘটের কৌশল সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
অবাধ অর্থনীতি [ Free Economy ] :
সমাজতান্ত্রিক বা রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির বিপরীতে পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে বোঝানোর জন্যেই এই কথা প্রচলন করা হয়। অবাধ বা মুক্ত অর্থনীতিতে উৎপাদন ও বিপণনের ওপর মূলত রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না; ক্রেতাসাধারণের গড় চাহিদাই উৎপাদনের রকম ও পরিমাণ নির্ধারণ করে। তবে, বাস্তবে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রেরই উৎপাদন ও বিপণনের ওপর কিছু-না-কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকেই এবং বিভিন্ন দেশে, এমনকি উন্নত পুঁজিবাদী দেশসমূহেও এখন রাষ্ট্র ক্রমশ অধিক থেকে অধিকতর হারে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করছে।
জার্মানির সিলভিও গোসেল (১৮৬২-১৯৩০) প্রমুখ অবাধ অর্থনীতির প্রবক্তারা মনে করেন যে, অর্থনৈতিক বৈকল্যের চিকিৎসার প্রধান উপায় হল নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট হারে মুদ্রামান হ্রাস করা এবং এর ফলে সৃষ্ট ফাঁক পূরণের জন্যে নয়া মুদ্রা বাজারে ছাড়া। এই ব্যবস্থায় মুদ্রার সার্কুলেশন বেড়ে যাবে, কারণ জনসাধারণ চাইবে মুদ্রামান কমার আগেই তা দিয়ে কোনো-না-কোনো দ্রব্য কিনে ফেলতে। মুদ্রার এই গতিশীলতা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে গতি সৃষ্টি করবে এবং ফলে কোনো অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দেবে না।
অবাধ প্রতিযোগিতা :
তত্ত্বগতভাবে এমন একটা পরিস্থিতি, যে-পরিস্থিতিতে উৎপাদন ও বণ্টনের ওপর সরকারের কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ থাকে না, বরং সরবরাহ ও চাহিদার শক্তিসমূহ এবং মূল্য প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন গতিতে চলতে পারে এবং পারস্পরিক প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে গুণগত ও পরিমাণগত বিকাশলাভ করে।
অবাধ বাণিজ্য [ Free Trade ] :
বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিনা বাধায় ও বিনা শুল্কে বাণিজ্য। সপ্তদশ অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে বাণিজ্যনীতির উদ্ভব ঘটে। তখন ইউরোপীয় দেশসমূহে ব্যাবসা-বাণিজ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার নীতিই প্রচলিত ছিল। এর বিপরীতেই দেখা দেয় অবাধ বাণিজ্যনীতি। ইংল্যান্ড প্রভৃতি যেসব দেশে পণ্য উ ৎপাদনব্যবস্থা বিশেষ লাভ করে, সেসব দেশের উদ্যোগেই অবাধ বাণিজ্যের নীতি উৎসাহিত কারণ ঐসব দেশে উৎপন্ন বিপুল পরিমাণ তখন দেশের বাজারে বিক্রি প্রয়োজীয়তা দেয়।
এই প্রয়োজন থেকেই অবাধ বাণিজ্যনীতির উদ্ভব এবং ইংল্যান্ড তার নেতৃত্ব গ্রহণ করে। শতাব্দীর অষ্টম দশক পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যনীতি বিশেষ প্রাধান্য লাভ করেছিল। সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিপুল শিল্পোন্নয়ন প্রয়াস কিন্তু উন্নততর কল-কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের অসমান প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে না পারায় দুর্বলতর দেশসমূহের শিল্পোন্নয়ন প্রায়শই বাধাপ্রাপ্ত হতে থাকে।
সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি রাষ্ট্র বিদেশী পণ্যের ওপর উচ্চহারে আমদানি শুল্ক ধার্য করে দেশের রাখার মহাযুদ্ধের পর উচ্চহারে শুল্ক বসিয়ে অসমান দেশের শিল্পকে রক্ষা প্রয়াস পেয়ে আসছে।
অভিজাততন্ত্র:
যে রাস্ট্রিয় ব্যবস্থায় শুধুমাত্র অভিজাত শ্রেণীরই কর্তৃত্ব বহাল সেই ব্যবস্থাকেই বলে অভিজাততন্ত্র। প্রাচীন গ্রীসে দাস-মালিকেরা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫ হওয়া সত্ত্বেও, শুধুমাত্র তারাই ছিল ভোটের অধিকারী এবং প্রতিনিধিত্ব ও রাষ্ট্র পরিচালনার একমাত্র হর্তাকর্তা।
জনসংখ্যার শতকরা ৯৫ জন অর্থাৎ দাসদের নাগরিক অধিকার দান দূরের কথা, তাদের মানুষ বলেই গণ্য করা হত না। প্রাচীন ভারতেও রাষ্ট্র পরিচালিত হত ক্ষত্রিয় ব্রাহ্মণদের দ্বারা। বিপুল সংখ্যক বৈশ্য ও শুদ্রদের রাস্ট্রীয় ব্যাপারে কোন এখতিয়ার ছিলো না।
অভিব্যক্তিবাদ [ Expressionism ] :
বিংশ শতাব্দীর প্রথম শিল্প ও সাহিত্যে এই ধারার উদ্ভব ঘটে। জার্মানির এফ. অস্ট্রিয়ার কোকোচকা, রাশিয়ার শ্যাগাল প্রমুখ ছিলেন প্রথম প্রবক্তা। অঙ্কনশিল্পে ভ্যানগগ, সাহিত্যে স্ট্রিন্ডবার্গ, ভাস্কর্যে ল্যামব্রাক, চলচ্চিত্রে আর. ওয়েইন, সঙ্গীতে শোনবার্গ প্রমুখ অভিব্যক্তিবাদের অনুশীলন করেন।
অভিব্যক্তিবাদীদের দর্শন ‘আমাদের হৃদয়ই একমাত্র প্রতিবিম্ব বাকি সব নিয়ম-কানুন অনর্থক, অগ্রহনীয়’। অভিব্যক্তিবাদীদের মতে যাই-ই ঘটুক-না কেন, যা সৃষ্টি করেছেন যেভাবে করেছেন সেটাই একমাত্র সত্য। এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে অভিব্যক্তিবাদীরা এমন বস্তু সৃষ্টি করেন, যা প্রায়শই বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন অথবা বাস্তবের পরিবর্তিত বা অতিরঞ্জিত রুপ।
আরও পড়ুন:
Comments are closed.