অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন দিদারুল আলম। চাকরি খোঁজার পাশাপাশি টিউশনি করেই চলছিল তার জীবনের চাকা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হয়েছিল তাকে। টিউশনি বন্ধ, কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। বিকল্প কিছু একটা করার পথ খুঁজছিলেন।অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন ।

ঠিক এমন সময় তাকে পথ দেখালেন কাজী আপন তিবরানী নামের একজন শিক্ষক। তার দেখানো স্বপ্নে শুরু হলো দিদারুল আলমের জীবনের নতুন গল্প। আট মাস নিজের মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে অন-লাইনে শুরু করেন সামুদ্রিক মাছের ক্ষুদ্র ব্যবসা।

অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই

অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী: দিদারুল আলমের দুই হাজারের সেই পুঁজি এখন আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে। দিদারুল আলম এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বহুদূর যাওয়ার। বললেন-ম্যাডাম আমাকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখিয়েছেন। তাই চাকরির জন্য না ঘুরে চেষ্টা করছি উদ্যোক্তা হওয়ার।

রোকসানা আক্তার সুমি। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা সদরে বসবাস করেন। বাসার কাজ ও লেখাপড়ার করেই দিন পার করতেন সুমি। করোনাভাইরাসের কারণে হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হয়েছিল তার পরিবারকেও ।

এ সময়ে রোকসানা আক্তার সুমিকে কাজী আপন তিবরানী পরামর্শ দেন উদোক্তা হওয়ায়। তার কথামতে কুমিল্লার ঐতিহ্য খাদি নিয়ে কাজ শুরু করেন সুমি। খাদি কাপড় কিনে নিজের হাতে বাহারি ব্লক ও নকশী কাজে তৈরি করেন থ্রী-পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি এবং ফতুয়া পণ্য। অনলাইনলে চলে কেনা বেচা।

অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই
এ রকম শুধু দিদারুল আলম কিংবা সুমিই নন, স্বপ্নবাজ নারী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কাজী আপন তিবরানীর উদ্যোগে পাল্টে গেছে হাজারো জীবনের গল্প।

এ শিক্ষকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অন-লাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী, গৃহবধূ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণীর নারী-পুরুষ। তিনি ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স নামক ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এ আহ্বান জানান।

যাদের মধ্যে অন্তত ১৫শ জন ইতোমধ্যে অন-লাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাব-লম্বী হয়ে উঠছেন। অনেকে হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তাও।

শুধু ফেসবুক পেজই নয়, ই কমার্সে উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত করতে বিনামূল্যে অন্তত ২০টি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন আপন তিবরানী। এর সবই করেছেন নিজ খরচে। ইতোমধ্যে তার এসব কার্যক্রম কুমিল্লায় বেশ সাড়া ফেলেছে। ই-কমার্স ঘিরে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আরও অনেকের কাজেরও।

শুরুর কথা বলতে গিয়ে কাজী আপন তিবরানী বাসসকে জানান, শিক্ষক বলতে আমি বুঝি শিক্ষার্থীদের পথ দেখানো। আমি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হলেও কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক।

অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই

তারা বন্ধুর মতো আমার কাছে সব কথাই শেয়ার করে। করোনার শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পরপরই তাদের টিউশনি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় অনেক শিক্ষার্থী বলতো- ম্যাডাম একটা টিউশনির ব্যবস্থা করে দেন না। আর তো চলতে পারছি না।

কারণ টিউশনি করেই চলে এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক। আর করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় বাসায় অলস বসে থাকতেও বিরক্ত লাগছিল।

এ ছাড়া অনেক আগে থেকেই চিন্তা ছিল নারীদের জন্য কিছু করার। তিবরানী জানান, ওই সময়টায় মনে হলো এসব শিক্ষার্থী চাচ্ছে কেউ একজন তাদের পথ দেখাক। ভাবছিলাম, তাদের জন্য কী করা যায়।

এরপর গত বছরের ১১ আগস্ট ভিক্টোরিয়া কলেজের সঙ্গে মিল রেখে এবং শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে চালু করলাম ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স নামে ফেসবুক পেজ। তাদের ছোটখাটো ব্যবসা করার পরামর্শ দিতে থাকলাম।

অবাক করা ব্যাপার হলো, প্রথম দিনেই পেজের সদস্য এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর মাত্র তিন দিনে ১০ হাজার। বর্তমানে এ  অলাইন ব্যবসার প¬্যাটফর্মে যুক্ত রয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার সদস্য।

প্রথমে আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্যোগটা নিলেও বর্তমানে এখানে আছেন তরুণ-তরুণী, বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী ও গৃহিণীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ।

অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই

তিবরানী আরও জানান, একসময় দেখলাম ই-কমার্সে তাদের দক্ষ করে তুলতে হলে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। এরপর স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপর অন-লাইনে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। প্রতিটি প্রশিক্ষণে ৫ হাজারের বেশি সদস্য অংশগ্রহণ করে।

এ ছাড়া সরাসরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে আরও প্রায় দশটি। ব্লক-বাটিকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করি। এতে বেশ সাড়া পড়ে। আবার যারা কৃষি কাজ করতে আগ্রহী তাদের কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি।

সেটাও সরাসরি কৃষি জমিতে গিয়ে। বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি সদস্য কিছু না কিছু করছেন। যাদের প্রায় ১৫শ জন অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাব-লম্বী হয়েছেন। কুমিল্লার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণরাও এ ক্ষুদ্র ব্যবসায় যুক্ত আছেন।

অনলাইনে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন অনেকেই

তিনি বলেন, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে এসব তরুণ-তরুণীর মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করা। চাকরির জন্য বসে না থেকে নিজে কিছু করা। গৃহিণীরাও যেন ঘরে বসে কিছু করতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করা। আর তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলা।

আরও দেখুনঃ

 

Comments are closed.