উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তি আজ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নাটোরের ‘উত্তরা গণভবন’ এর নামফলক স্থাপন করেন। উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তি আজ।

উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তি আজ

এ উপলক্ষে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সেজেছে উত্তরা গণভবনের প্রবেশদ্বার। সকালে প্রথম ৫০ দর্শনার্থীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় আর বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যায় আতসবাজী।

তবে নাটোরবাসীর দাবি উত্তরা গণ-ভবনে মন্ত্রী পরিষদের সভা আয়োজনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

দেশটাই বঙ্গবন্ধুর নিজের আঙিনা। এদেশের মাটি আর মানুষের সাথে তাঁর আতœার সম্পর্ক। কিন্তু নাটোরের উত্তরা গণ-ভবন যেন একটু বেশী আপন। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় আঙিনা নাটোরের উত্তরা গণ-ভবন!

উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তি আজ

স্বাধীনতা উত্তর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র এক মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু নাটোরে আসেন। ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এদিন দিঘাপতিয়ার গভর্ণর হাউজকে ‘উত্তরা গণ-ভবন’ হিসেবে নামফলক উন্মোচন করেন তিনি। গণ-ভবনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে যায় নাটোর।

বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের গহীনে ছিলো নাটোরের অবস্থান। ভৌগলিক অবস্থানে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হওয়ায় নাটোরকে কেন্দ্র করেই উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা ভাবেন তিনি।

মন্ত্রী পরিষদের সভা নাটোরের উত্তরা গণ-ভবনে আয়োজনের পরিকল্পনা করেন তিনি। ঘোষণা দেন, নাটোর হবে দ্বিতীয় রাজধানী। দ্বিতীয় রাজধানীর পরিকল্পনায়, নাটোরে স্থাপন করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচার কেন্দ্র।

উত্তরা গণভবনকে সরকার প্রধানের অন্যতম দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নাটোরকে নির্বাচন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

গণভবনে মন্ত্রী পরিষদের সভা আয়োজন এবং নাটোরকে দ্বিতীয় রাজধানী করার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক আগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও এডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ।

উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তি আজ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো ভাইস চ্যান্সেলর ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম উত্তরা গণ-ভবনে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান প্রসঙ্গে বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে উত্তরবঙ্গ সফরে আসলে তিনি সুযোগ বুঝে নাটোরে আসতেন এবং উত্তরা গণভবনে অবস্থান করতেন।

১৯৭৩ সালের ৯ জানুয়ারি শহরের বড়হরিশপুরে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন তিনি। যথারীতি ঐদিন উত্তরা গণ-ভবনে অবস্থান করেন। একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরের জেলাগুলোতে সফরের প্রস্তুতি হিসেবে উত্তরা গণ-ভবনে আসেন।কিন্তু পাবনায় দলীয় একজন নেতার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধু উত্তরা গণভবন থেকে পাবনা রওনা হয়ে যান।

একই বছরে উত্তরের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে নাটোরের উত্তরা গণ-ভবনে আসেন এবং ১ জুলাই গণভবনে আইন-শৃংখলা এবং বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভা করেন।

একই দিনে গণ-ভবনে নব নির্বাচিত রাকসু এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ দেন এবং তাদেরকে দেশ সেবায় মনোনিবেশ করতে বলেন।১৯৭৪ সালেও বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নাটোরের উত্তরা গণ-ভবনে আসেন।

বাংলাদেশের ‘দুষ্প্রাপ্য’ ছবি সমগ্র নামের ফেসবুক পাতায় চলতি বছরের ৫ জুলাই শাহরিয়ার বর্ন এর নামে পোষ্ট করা ছবিতে বঙ্গবন্ধু গণভবনের হ্রদ বা পরিখা থেকে জাল দিয়ে ধরা মাছ দেখছেন।

সাথে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ রাসেল, জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।

উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তি আজ

এ ছবিতে স্টাইপ গেঞ্জি, হাফপ্যান্ট, সাদা মোজা ও সাদা কেডস্ পড়া হাস্যোজ্জ্বল শেখ রাসেল আগ্রহ সহকারে মাছ দেখছেন। শেখ রাসেলের আগ্রহেই পরিখা থেকে মাছ ধরা হয়েছিল বলে জানান গণভবনে কর্মরত নুর মোহাম্মদ।

গণভবনের ইটালিয়ান গার্ডেনে একই পোশাকে হাস্যোজ্জ্বল শেখ রাসেলের আরো দু’টো একক ছবির সফট কপি জেলা প্রশাসনের হাতে রয়েছে।

মাছ ধরার ছবিতে সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবীতে বঙ্গবন্ধু যেন বাঙালী’র প্রতিকৃতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী। গণভবনে অবস্থানকালে তিনি আগন্তুক সকল মানুষের সাথে দেখা করতেন এবং তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। সমস্যা সমাধান করে দিতেন।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মাজেদুর রহমান চাঁদ বলেন, উত্তরা গণভবনে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার ও পোশাক সংকটের কথা বঙ্গবন্ধুকে জানাই।

উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তি আজ

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিন বছর কিছু দিতে পারবোনা, দেশের সাধারণ মানুষ না খেয়ে আছে। কষ্ট করে ভার্সিটি চালু রেখেছি। তবে অল্প ক’দিনের মধ্যে টিসিবি’র মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল শিক্ষার্থীর কাছে পোশাক পৌঁছে যায়।

একবার বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার কথা বলাতে বঙ্গবন্ধু বিদেশ যেতে নিষেধ করে বলেছিলেন, তোরা চলে গেলে দেশ গড়বে কে? দেশের উন্নয়ন চিন্তায় মগ্ন থাকতেন বঙ্গবন্ধু। তিনি মাটি আর মানুষের কাছে থাকতে পছন্দ করতেন, পছন্দ করতেন না তোষামোদী।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের দুই বারের ভিপি এবং পরবর্তীতে সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সেন্টু বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মরণশক্তি ছিলো প্রখর, ছাত্রলীগ নেতাদের নাম মনে রাখতে পারতেন।

উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তি উপলক্ষে নাটোরবাসী বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে মন্ত্রী পরিষদের সভা আয়োজনের দাবিতে সোচ্চার হন।

উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তি আজ

জনমত বিবেচনা করে রাজশাহীর সাবেক বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর এ ব্যাপারে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে চিঠি দেন।

তবে পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে উত্তরা গণভবনে একটি উৎসব আয়োজন এবং মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের আয়োজনে নিশ্চয়ই মন্ত্রী পরিষদ সভা আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক ও উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ।

আরও দেখুনঃ

মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় অনেক প্রত্যাশা নিয়ে : মেয়র

উত্তরা গণভবন