কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের প্রয়াণের ৫০ বছর ,বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিকের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি কলকাতায় মারা যান। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জীবনের শেষবেলায় কলম ধরেছিলেন কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছিলেন ‘১৯৭১’ উপন্যাস। সেখানে তিনি লিখে গেছেন সরল সমীক্ষণে ঐতিহাসিক ঘটনার মুহূর্ত।
‘সুতপার তপস্যা’ এবং ‘একটি কালো মেয়ের কথা’ বই দুটি প্রকাশের আলোচনা হচ্ছিল। ঠিক তখনই সাহিত্যিক তখন গুরুতর অসুস্থ। অসুস্থ অবস্থার মধ্যেই তিনি বলেন, ‘দুটো বই এক হয়ে বেরোবে, তার নাম হবে- ‘১৯৭১’। মহান সাহিত্যিক তার “ ১৯৭১” গ্রন্থে বাংলাদেশিদের ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা নিপুনভাবে তুলে ধরেছেন।
Table of Contents
কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যাযয়ের প্রয়াণের ৫০ বছর
কথাসাহিত্যিকের জন্ম ও পড়াশুনা
বিশিষ্ট এই কথাসাহিত্যিকের জন্ম ১৮৯৮ সালের ২৪ জুলাই বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে জমিদার পরিবারে। বাবা-মায়ের নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রভাবতী দেবী। তারাশঙ্করের বাল্যজীবন কাটে গ্রামের পরিবেশেই। লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬ সালে এন্ট্রান্স (প্রবেশিকা) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে এবং পরে সাউথ সুবার্বন কলেজে (এখনকার আশুতোষ কলেজ) ভর্তি হন। তবে স্বাস্থ্যভঙ্গ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া তার অসম্পূর্ণই থেকে গেছে। ১৯১৬ সালে তিনি উমাশশী দেবী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন । তিনি ৩ পূত্র ও ২কন্যা সন্তান জনক ছিলেন।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হলেও যুবক অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন গান্ধীজির ডাকা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে ৷ আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং কিছুদিন জেলও খাটেন। কিন্তু ওই কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তার সাহিত্য চর্চার প্রকাশ ঘটে। সেখানেই তিনি ‘পাষাণপুরী’ আর ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ লেখা শুরু করেন।
পরে রাজনীতির উপদলীয় কোন্দল ও সংঘাতের কারণে তিনি ক্রমশ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারান ৷ বেশি করে মন দেন লেখালেখিতে ৷
১৯২৯ সাল থেকে ৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি তার কালজয়ী উপন্যাসগুলো রচনা করেছিলেন। ১৯৩২ সালে তিনি প্রথমবার শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেন। একই বছরে তার প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ প্রকাশ পায়। এর পর ক্রমান্বয়ে তিনি রচনা করেন ‘রায় কমল’ (১৯৩৫), ‘ধাত্রীদেবতা’ (১৯৩৯), ‘কালিন্দী’ (১৯৩৯), ‘কবি’ (১৯৪২), ‘গণদেবতা’ (১৯৪৩), ‘পঞ্চগ্রাম’ (১৯৪৪), ‘মন্বন্তর’ (১৯৪৪), ‘সন্দীপন পাঠশালা’ (১৯৪৬), ‘ঝড় ও ঝরাপাতা’ (১৯৪৬), আর ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ (১৯৪৬-৪৭)৷
লেখালেখির দিকে ঝুঁকলেও রাজনীতির ছোঁয়া তিনি এড়াতে পারেননি ৷ ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্য হিসেবে আট বছর দায়িত্ব পালন করেন ৷ একবার তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬০ সালে তাকে রাজ্যসভার সদস্য করে পাঠান হয় ৷
তারাশঙ্করের প্রথম গল্প ‘রসকলি’ সেকালের বিখ্যাত পত্রিকা কল্লোল-এ প্রকাশিত হয়। এছাড়া কালিকলম, বঙ্গশ্রী, শনিবারের চিঠি প্রভৃতি প্রথম শ্রেণির পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়।
কর্মজীবনে তিনি কিছু কাল কলকাতায় কয়লার ব্যবসা এবং কিছুকাল কানপুরে চাকরি করেন। ১৯৭০ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি নিজে জমিদার বংশের সন্তান হয়ে কাছ থেকে দেখেছেন কীভাবে জমিদারি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়, পাশাপাশি নব্য ধনিক শ্রেণির উদ্ভব ঘটে এবং দিকে দিকে কল-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তখন একদিকে চলছিল গ্রাম্য সমাজের ভাঙন, অন্যদিকে শহর জীবনের বিকাশ। সমাজের এই নীরব পরিবর্তন তার রচনায় নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর ভারত তথা বাঙালি সমাজের উত্থান পতন জানতে হলে আমাদের তারাশঙ্করের সাহিত্য পড়তে হবে।
কথাসাহিত্যিকের লেখার বৈশিষ্ঠ
তার লেখায় বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছোট বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তার সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তার লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তার অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সেখানে আরও আছে গ্রাম জীবনের ভাঙনের কথা, নগর জীবনের বিকাশের কথা।
সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তার অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার অজয় কর সহ বেশ কিছু পরিচালক তারাশঙ্করের লেখাকেই ভিত্তি ৪০ টির বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় তারাশঙ্করের জলসাঘর এবং অভিযান উপন্যাসের সফল চিত্ররূপ দিয়েছেন।
রাজনৈতিক জীবনকে অবশ্যই ছাপিয়ে গিয়েছিল তার লেখক স্বত্তা ৷ তার সাহিত্য চর্চার ফসল হিসেবে পাওয়া যায় ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি গল্পের বই, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধের বই, ৪টি আত্মজীবনী এবং ২টি ভ্রমণকাহিনী ।
কথাসাহিত্যিকের পুরুষ্কার
বিংশ শতাব্দীর এই লেখক ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে “রবীন্দ্র পুরস্কার” লাভ করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান। এছাড়াও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার , ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মশ্রী ও ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মভূষণ খেতাব লাভ করেন।
কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সর্ম্পকে আরও জানতে
উইকিপিডিয়া: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলাপিডিয়া: বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর
বাংলাদেশের খবর সাইটটি ব্যবহার করায় আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি দেখুন, যোগাযোগের বিস্তারিত দেয়া আছে।
Comments are closed.