কলা চাষের কথা – মহিউদ্দীন খান আলমগীর

কলা চাষের কথা : ছেলে বেলায় মুরুব্বিদের সাথে কয়েক বার শীত মৌসুমে আমাদের এলাকার কাছের নদী ডাকাতিয়াতে মাছের পোনা সংগ্রহ করার জন্য নৌকা করে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তখন দেখেছিলাম সাত সকালে আটিয়া কলা খেয়ে জেলেরা নদীতে পোনা ধরতে নামতেন। বলা হয়েছিল আটিয়া কলা শীতে তাদের শরীরকে গরম রাখে। এর পরে গ্রাম থেকে ঢাকায় কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কালে যাওয়ার পথে মুন্সিগঞ্জে স্টিমার ঘাটে স্টিমার থামার সাথে সাথে সাগর কলা নিয়ে বিক্রির জন্য অসংখ্য ছোট ছোট নৌকা স্টিমারকে ঘিরে ফেলতে দেখেছি।

কলা চাষের কথা - মহিউদ্দীন খান আলমগীর - Dr. Mohiuddin Khan Alamgir, ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর (9)
Dr. Mohiuddin Khan Alamgir, ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর

মুন্সিগঞ্জের সাগর কলা যেমনি পুষ্ট তেমনি মিষ্টি বলে দেখেছি ও অনুভব করেছি। আরো পরে কর্ম জীবনে দেখেছি যে সাগর কলা উৎপাদনের মূল কেন্দ্র মুন্সিগঞ্জ থেকে নরসিংদী এবং তার পরে বগুড়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে। আমাদের এলাকায় এই সময়ে সবরি কলার উৎপাদন বা লভ্যতা তেমন চোখে আসেনি। আনাজ কলার উৎপাদন ও লভ্যতা অবশ্য দেশের সব এলাকায়ই প্রত্যক্ষ করেছি। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন এলাকায় একটি নামকরা ভারতীয় বিভাগীয় বিপণীতে আমি গিয়েছিলাম। সেখানে কাঁচা-পাকা কলার সাথে সাথে কলার পাতা, মোচা এমনকি, আলকা বা কলা গাছের শাস বিক্রি হতে দেখেছি। বিক্রেতা বলেছেন খাওয়ার বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসবের প্রয়োজন অভিবাসী ভারতীয় ও চীনেদের মধ্যে বিদ্যমান।

আমরা এ দেশে এখন পর্যন্ত কলার পাতা, মোচা এবং আলকা বা শাঁসকে তেমন বিক্রয়যোগ্য পণ্য হিসেবে মনে করিনা। অধুনা ঢাকায় কিছু কিছু বিভাগীয় বিপণীতে কলার মোচা এবং আলকা বিক্রয়ের জন্য মজুত রাখা শুরু হয়েছে। কয়েক যুগ আগ পর্যন্ত কলার পাতায় কাংগালী ভোজের আয়োজন দেখেছি। কলার পাতা অবশ্য দেশের উন্নয়নের এই পর্যায়ে তেমন ভাবে ব্যবহৃত হয়না। কলার পাতা, কলা গাছের ডাল ও আলকার আচ্ছাদন শুকিয়ে এখনও জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কলার খোসা উত্তম পশু খাদ্য হিসাবে ব্যবহার্য। পাকা কলা ভেজে সংরক্ষণ করাও স্থান বিশেষে নজরে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশে কলা চাষ ও বিপণন বিষয়ক তথ্যাদি সম্পর্কে অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে আমায় বেশ কৌতুহলী করেছে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশে কলা চাষের উপর একটি জরিপলব্ধ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই কৌতুহল অনেকাংশে মিটিয়েছে। দেশের ১১৮ টি অপ্রধান ফসলের মধ্যে কলা অন্যতম। প্রকৃত পক্ষে কলা এই দেশের উৎপাদিত সকল ফলের মধ্যে প্রধান। এই প্রেক্ষিতে এই জরিপে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তাদি নীতি নির্ধারকদের জন্য কলা চাষের বিস্তারণে গুরুত্বপূর্ণ ও বিবেচনীয় উপকরণ।

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫টি পার্বত্য জেলা যথা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন ও খাগরাছড়িকে ভাগে নিয়ে বাকী ৫৯ সমতল ভূমির জেলাকে ২য় ভাগে অন্তর্ভূক্ত করে গৃহস্থালী প্রতি ন্যূনপক্ষে শতাংশ জমি কলা চাষে প্রযুক্তকৃত খামারগুলো ২০১৩ সালে দৈবচয়নের ভিত্তিতে জরিপ হয় । পরিসংখ্যানের তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ এভাবে পরিচালিত দৈবচয়ন ভিত্তিতে সম্পাদিত জরিপে তথ্য-উপাত্তাদি সারা দেশে চাষের প্রকৃতি অনুধাবন বলে যেতে পারে।

Banana Cultivation, কলা চাষ 5বাংলাদেশের কৃষি পরিসংখ্যানের বর্ষপুস্তকের প্রাক্কলন আনুযায়ী দেশে দাগে ১৩০০০০ জমিতে কলা উৎপাদনের খামার বিদ্যমান। ২০০৮ সালে উৎপাদনের খামার আবৃত জমির পরিমাণ ২০০৬-২০০৭ সালের ১৪৫০০০ থেকে ১৩১০০০ একরে নেমে গিয়েছিল বিদিত হয়েছে। ২০১১-২০১২ সালে এই খামারে আবৃত জমির পরিমান আরও নীচে- ১২২০০০ একরে- নেমে এসেছিল। এভাবে নেমে আসার কারণ ঝড়ের বিপর্যস্ততা এবং ক্রমান্বয়ে চাষযোগ্য ভূমিতে বাসগৃহ ও শিল্পের প্রসার ধারণা করা যায়। ন্যূনপক্ষে শতাংশ আয়তন বিশিষ্ট খামারে কলার বাণিজ্যিক উৎপাদন হয় বলে হয়।

এ ছাড়া গৃহস্থালীর কোনাকানা সংলগ্ন পতিত জমিতে খোরপোষের কলা উৎপাদিত হয়। খোরপোষে উৎপাদিত কলার জন্য ব্যবহৃত সর্বমোট জমি সম্ভবত বাণিজ্যিক উৎপাদিত কলার চাষে প্রযুক্ত সর্বমোট জমির সমপরিমাণ। এই ধারণায় বাংলাদেশে মোট দাগে ২৬০০০০ একর জমিতে চাষ হয় ধরে নেয়া যায়। এই জরিপে কলার বানিজ্যিক চাষের আওতায় এই সমকালে যে ১৯২৮৭৭ একর জমি আছে বলে বিদিতি হয়েছে তার মধ্যে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দারবণে বিদ্যমান প্রায় শতকরা ২৩ ভাগ। বাকি ৫৯ টি জেলায় রয়েছে শতকরা ৭৭ ভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী কলা দেশে উৎপাদিত ফলাদির প্রায় শতকরা ২০ ভাগ এবং বাণিজ্যিক ভাবে ফল উৎপাদনে প্রযুক্ত জমির প্রায় শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশে উৎপাদিত কলার মধ্যে প্রধান হলো সাগর, সবরি, চম্পা, বাংলা, আটি বা আটিয়া, আনাজি, কাঠালী, সিংগাপুরী ও নেপালী ।

জরিপে দেখা গেছে যে সারা বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভাবে কলা চাষে প্রযুক্ত জমির শতকরা ২.৪৮ ভাগে আনাজি কলা, শতকরা ২০.৩৯ ভাগে বাংলা কলা, শতকরা ১৫.৪৬ ভাগে চম্পা কলা, শতকরা ৩১.৬৪ ভাগে সবরি কলা এবং শতকরা ২৪.১৩ ভাগে সাগর কলা উৎপাদিত হয়। মনে হয় সময়াত্তরে আটিয়া কলার চাহিদা আপেক্ষিক ভাবে কমে এসেছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ৩টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায়, শতকরা ১৭ ভাগের চাইতে বেশি জমিতে বাংলা কলা উৎপাদিত হয়।

আর অন্যান্য জেলা বা সমতল ভ’মিতে শতকরা প্রায় ৩২ ভাগে উৎপাদিত হয় সবরি কলা, শতকরা ২৪ ভাগ উৎপাদিত হয়। বাংলা কলা চাপা কলার উৎপাদন হয়। ভূমিতে প্রায় শতকরা ১১ ভাগ জমিতে। অথচ পার্বত্য জেলা সমূহে এর উৎপাদন সীমিত শতকরা প্রায় ৫ ভাগ জমিতে। কলা চাষে প্রযুক্ত জমির এই পরিমাণ নির্দেশ করে যে সবরি, সাগর, চাপা ও বাংলা কলা চাষীদের কাছে আকর্ষণীয় উৎপাদন। কাঠালী, সিংগাপুরী ও নেপালী কলার চাষ খুবই কম।

জরিপে দেখা গেছে, বাণিজ্যিক ভাবে কলা চাষে প্রযুক্ত জমির শতকরা প্রায় ৮৭ ভাগ চাষীদের নিজস্ব মালিকানা ভুক্ত। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ৩টি পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলার বাইরে ৫৯ টি জেলায় কলা চাষে প্রযুক্ত জমির প্রায় শতকরা ৮২ ভাগ নিজস্ব মালিকানা ভুক্ত । চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ৩টি পার্বত্য জেলায় স্বমালিকানাধীন কলার খামারের আওতায় চাষলভ্য জমির তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম জমির বিদ্যমানতা সম্ভবত এসব এলাকায় সাম্প্রতিক কালে এসব খামারিদের অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যায় অবস্থানের দ্যোতক।Banana Cultivation, কলা চাষ 5

ধারণা করা যায় যে এসব পার্বত্য জেলায় লোকসংখ্যা ও অভিবাসন বৃদ্ধির সাথে সাথে স্ব মালিকানাধীন কলার খামারের সংখ্যা বাড়বে। সারা বাংলাদেশে সকল চাষীর শতকরা ৩.৩ ভাগ বাণিজ্যিক ভাবে ভাগ চাষী হিসাবে কলা উৎপাদন করেন। এদের মধ্যে ইজারা নেয়া জমিতে কলা উৎপাদন করেন প্রায় শতকরা ৮ ভাগ। কলার বাণিজ্যিক চাষে প্রযুক্ত জমির শতকরা ১.৫ ভাগ বন্ধকী জমি । এর প্রেক্ষিতে কার্যকরণ সূত্র অনুযায়ী বলা চলে যে কলা চাষের উন্নয়ন বা উৎপাদনশীলতা দেশের কৃষি জমির নিজস্ব মালিকানা ভিত্তিক এবং এই কারণে ভাগ চাষ ও ইজারা পদ্ধতির আকার বা তার সীমিত করণের উপর নির্ভরশীল নয়।

জরিপে দেখা গেছে যে শতকরা প্রায় ৭৪ ভাগ কলার খামারে কলা একক ফল বা ফসল হিসাবে উৎপাদিত হয়। আর শতকরা ২৫ ভাগ খামারে কলা অন্যান্য ফল ফসলের সাথে মিশ্রভাবে উৎপাদিত হয়। জরিপে জানা গেছে যে এক একর জমিতে কলা উৎপাদনে রোপনের জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় শ্রমদিবস, আগাছা পরিস্কারের জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ২২ শ্রমদিবস এবং ফসল তোলার জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ৮ শ্রমদিবস এক একর জমিতে কলা চাষের জন্য সর্বমোট প্রয়োজন হয় ২৯ শ্রমদিবস। এও দেখা গেছে সমতল ভূমিতে এক একর কলা চাষে প্রযুক্ত হয় প্রায় ৪১ শ্রমদিবস।

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ৩টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় প্রয়োজন হয় একর প্রতি ২৩ শ্রমদিবস। অন্য কথায় এ সব পার্বত্য জেলায় কলা চাষ তেমন শ্রম নিবিঢ় নয়: এসব জেলায় রোপনের পর কলা গাছের বেড়ে উঠা অনেকাংশে প্রকৃতির উপর ছেড়ে দেয়া হয়।

জরিপে জানা গেছে যে সারা দেশে গড়ে কলা চাষে প্রযুক্ত জমির বাৎসরিক ইজারা মূল্য একর প্রতি ২১৬১৪ টাকা। পার্বত্য এলাকায় একর প্রতি বাৎসরিক ইজারা মূল্য ৮০৯১ টাকা এবং অন্যান্য জেলা অর্থাৎ সমতল ভূমিতে ২১৬২৪ টাকা এতে মনে হয় যে ভূপ্রকৃতির কারণে পার্বত্য এলাকায় চাষে ইজারায় জমি নেয়ার চাহিদা সমতল ভূমি কম।

জরিপ অনুযায়ী সাগর কলার একর প্রতি উৎপাদন খরচ সবচাইতে বেশি ৫৫৫৫৮ উৎপাদন হয়েছে। আর অন্যান্য জেলায় উৎপাদন খরচ হিসাবকৃত হয়েছে ৫৫৯৬৭ টাকা। বোঝা যাচ্ছে কলা পার্বত্য জেলা সমূহে অনেকটা অনাদরে উৎপন্ন হয়। সবরি কলার একর গড় উৎপাদন ব্যয় হিসাবকৃত হয়েছে ৪০৪০৮ টাকা। পার্বত্য জেলায় এই উৎপাদন হিসাবকৃত হয়েছে গড়ে টাকায় এবং অন্যান্য জেলায় এর পরিমাণ হিসাবকৃত হয়েছে ৪০৮৪৩ টাকায়। ক্ষেত্রে প্রতীয়মান হচ্ছে যে পার্বত্য জেলায় সবরি কলার উৎপাদন অনেকটা প্রকৃতির উপর নির্ভর সমতল ভূমিতে সবরিকে এর বিপরীতে যত্ন সহকারে লালন করা হয়।

সারাদেশে চাপা একর প্রতি গড় উৎপাদন ব্যয় জরিপকৃত হয়েছে ৩৫৩৭৩ টাকা। পার্বত্য জেলায় কলার একর গড় উৎপাদন বিদিত হয়েছে ১০৪৫৯ টাকা। সমতল ভূমি অন্যান্য জেলায় এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬৬৮২ টাকায়।Banana Cultivation, কলা চাষ 5

দেশে বাংলা কলার একর প্রতি উৎপাদন বিদিত হয়েছে ১২০৮৭ টাকায় যার মধ্যে পার্বত্য জেলায় ব্যয়ের পরিমাণ হিসাবকৃত হয়েছে ১০২৫৩ টাকা এবং অন্যান্য জেলা বা সমতল ভূমিতে ২১৪৬৯ টাকা। আনাজি কলার ক্ষেত্রে সারা দেশে একর প্রতি গড় উৎপাদন ব্যয় বিদিত হয়েছে ৩৭১৮৪ টাকা। এর মধ্যে ৫টি পার্বত্য জেলায় একর প্রতি উৎপাদন ব্যয় হিসাবকৃত হয়েছে ১০৯৫২ টাকায় এবং অন্যান্য জেলায় ৩৯২৭৫ টাকায়। এসব ক্ষেত্রেও এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে পার্বত্য এলাকায় উৎপাদনের তুলনায় সমতল ভূমিতে সকল রকম কলার উৎপাদনে অধিকতর বিনিয়োগ করা হয়।

জরিপে দেখা গেছে যে সারা দেশে কলা চাষে জমি তৈরি করণে ব্যয় হয় গড়ে একর প্রতি ৪৪৭০ টাকা, চারা আহরণে ব্যয়ের পরিমাণ একর প্রতি ২১৭৫ টাকা, চারা লাগানোয় ব্যয় হয় একর প্রতি ১৫৬৮ টাকা, সেচে ব্যয় হয় একর প্রতি ৩৩৯২ টাকা, কীটনাশকে ব্যয় হয় একর প্রতি ১৮৮১ টাকা। সারে ব্যয় হয় একর প্রতি ১৩৮০৩ টাকা, ফসল আহরণে ব্যয় হয় একর প্রতি ১৭৩৬ টাকা, পরিবহণে ব্যয় হয় একর প্রতি ৮১৩ টাকা। এবং অন্যান্য ব্যয় সহ মোট উৎপাদনের ব্যয় দাঁড়ায় একর প্রতি ৩৭৩৬৪ টাকা।

এর বিপরীতে দেখা গেছে যে পার্বত্য ৫টি জেলায় একর প্রতি উৎপাদন ব্যয় ১০৩০৭ টাকা যার মধ্যে সেখানে সবচাইতে কম ব্যয় হয় সেচে (১৩ টাকা)। কীটনাশকাদী (৩১ টাকা) এবং সারে (২৫৮ টাকা) একর প্রতি ব্যয়ের পরিমাণ ও আপেক্ষিক ভাবে কম। এর তুলনায় সমতল ভূমিতে কলা চাষে একর প্রতি উৎপাদন ব্যয় হয় ৪৫২৯৪ টাকা যার মধ্যে সবচাইতে বেশি ব্যয় হয় (১৭৭৭৩ টাকা) সারে। সমতল এলাকায় প্রতি একরে সেচ বাবদ ব্যয় হয় ৪৩৮২ টাকা এবং আগাছা পরিস্কার করণে ব্যয় হয় ৪৫৫১ টাকা । দৃশ্যত সমতল ভূমিতে কলা উৎপাদনে অধিকতর যত্ন প্রযুক্ত হয় ।

এই জরিপে সারা দেশে কলার একর প্রতি উৎপাদন মূল্য বা দাম ১১৪৬০৬ টাকায় হিসাবকৃত হয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য ৫টি জেলায় উৎপাদন মূল্য বিদিত হয়েছে ২৮৮৭৮ টাকা। বাকী ৫৯ জেলার ক্ষেত্রে উৎপাদন মূল্য হিসাবকৃত হয়েছে ১৪০৫৮২ টাকায়। একর প্রতি উৎপাদন মূল্য সাগর কলার ক্ষেত্রে বিদিত হয়েছে ১৫৮৩৮২ টাকা, সবরি কলার ক্ষেত্রে ১৩৭৯২৯ টাকা। চাপা কলার ক্ষেত্রে ১০৮৫৩২ টাকা, এবং আনাজি কলার বেলায় ১১০৯৬২ টাকা ।Banana Cultivation, কলা চাষ 5

সব প্রকৃতির কলার একর প্রতি গড় উৎপাদন মূল্য সমতল ভূমিতে হিসাবকৃত হয়েছে ১৪০৫৮২ টাকা। আর ৫টি পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে গড় উৎপাদন মূল্য ২৮৮৭৮ টাকায় বিদিত হয়েছে। পার্বত্য এলাকার উৎপাদন মূল্য অন্যান্য এলাকার একর প্রতি উৎপাদনের চেয়ে শতকরা প্রায় ২১ ভাগ কম। এর কারণ সম্ভবত পার্বত্য জেলা সমূহে কলার বিপণন দূর্বল হাটবাজারে চাহিদা কম এবং নগর এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিবহনে অপর্যাপ্ততা বিদ্যমান।

জরিপে প্রাপ্ত উপাত্তাদির আলোকে আনাজি কলার ক্ষেত্রে একর প্রতি উৎপাদনশীলতা বিদিত হয়েছে ২.৭৬ এ। দেশের অন্যান্য ফলের এই উৎপাদনশীলতা ক্ষেত্রে পরিমাণ হিসাবকৃত হয়েছে ৩.০৫ এ, চাপা ক্ষেত্রে সবরি কলার ক্ষেত্রে ৩.৩৮ সাগরের ক্ষেত্রে ২.৭৩ এ। সমতল বাংলা কলার উৎপাদনশীলতা হিসাবকৃত হয়েছে ৪.২১ এ এবং জেলা সমূহে আনাজির উৎপাদনশীলতা বিদিত হয়েছে ৫.১৮ এ বা বেশীতে। এর কারণ সম্ভবত: সে এলাকায় আনাজি কলার খাদ্য বিস্তৃত ব্যবহার।

উৎপাদনশীলতার নিরীখে সবরির সর্বোচ্চ সত্ত্বেও চাষ অন্যান্য এলাকায় দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে বলে মনে হয়। কারণ সম্ভবত বিভিন্ন জাতের কলা চাষে বিভিন্ন প্রকৃতির ভূমির লভ্যতা। আটিয়া কলার ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা এ হয়েছে। নিম্নতর উৎপাদন মূল্য সত্ত্বেও একর প্রতি উৎপাদনশীলতায় কলার আপেক্ষিক ভাবে উঁচু স্থানে অবস্থান উৎপাদন প্রকৃয়ায় বেশী নয় বরং কম ব্যয়ের দ্যোতক।

আমাদের দেশ থেকে বিদেশে বার্ষিক কলা কলাজাত পণ্যাদির মূল্য ১১৯২১৩৫ টাকা দেশে কলার চাহিদা বিস্তৃত বলে রফতানি বাড়ছেনা বলে মনে হয়। কলার বহুবিধ ব্যবহার ও সেই লক্ষ্যে বাজারজাতকরণের নজর দেয়া প্রয়োজন। পার্বত্য ৫টি বাণিজ্যিক ভাবে কলা উৎপাদনে যথা প্রয়োজন নজর দেয়া হচ্ছে না প্রতিভাত হয়। পুষ্টির নিরীখে কলা চাষ দেশে বাড়ানো প্রয়োজন।

পার্বত্য এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে কলা চাষের বিস্তৃতি বাড়ানোর বিদ্যমান। এদেশে কলা পরিবহণ ও সংরক্ষণে থাইল্যান্ড গোয়াতেমেলার আপেক্ষিকতায় প্রযুক্তিয় উপকরণ কম প্রয়োগ করা হয়। এ কলার তার সংরক্ষণ পরিবহনে যথাযথ প্রযুক্তিয় উপকরণ করতে হবে। সাম্প্রতিক কালে দেশের কলা বিপণনে মাত্রায় ফরমালিনের ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ যথা প্রয়োজন নজর দেয়া জনস্বার্থিক

বহুবিধ ব্যবহার বাড়ানোর দিকেও নজর দেয়া কলা চাষের সার্থক হবে। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন কলা চাষে গবেষণা প্রযুক্তি করে এর প্রাকৃতিক উৎপাদন, মিষ্টতা অন্যান্য গুণাবলী উন্নীত করণ এর সংরক্ষণ বহুবিধ ব্যবহার বাড়ানো। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানী করণের বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান। আশা করি উপর এই জরিপ প্রতিবেদন এদিকে প্রযুক্তিবিদদের যথার্থ দাবিদার হবে।

কলা চাষের কথা

লেখক – মহিউদ্দীন খান আলমগীর

মহিউদ্দীন খান (মখা) আলমগীর (জন্মঃ ১৯৪২) বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, লেখক, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রী। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন।

আরও পড়ুন:

Comments are closed.