ছিনতাই বেড়েছে, প্রশাসনের নেই কোণ পদক্ষেপ : করোনা, ডেঙ্গুসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত এমনকি দিনে-দুপুরেও অহরহ ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এসব ঘটনায় প্রতিদিন মানুষ মূল্যবান জিনিস যেমন খোয়াচ্ছে তেমনি আহত ও নিহত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। কম হলেও ঢাকা শহরে চিহ্নিত প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ছিনতাইয়ের স্পট আছে। যেখানে প্রতিনিয়ত তৎপরতা চালাচ্ছে ছিনতাইকারী চক্র।
সম্প্রতি রাজধানীর বসিলা ব্রিজ থেকে গাবতলী ব্রিজ পর্যন্ত নদীর পাড় ঘেঁষে মনোরম ওয়াকওয়ে তৈরি হয়েছে। এখানে প্রতিদিন ঘুরতে আসে নানা পেশার মানুষ। তাছাড়া এলাকার মানুষ যাতায়াতের জন্যে নদীপাড়ের হাঁটার রাস্তাটি ব্যবহার করে। সন্ধ্যার পরে এখানে হানা দেয় ছিনতাইকারীর দল। তাদের হাতে থাকে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র। প্রায় প্রতিদিন মোবাইল, টাকা পয়সা ছিনতাই করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
ছিনতাই বেড়েছে ,ছিনতাই প্রতিরোধে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যত দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য।
গত ২৯ আগস্ট রাত ৯ টার সময় ছিনতাইকারীর হাতে আহত হন করিম নামে এক যুবক। যুবকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাকে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এলাকার কিছু লোক তাকে নদীতে নেমে উদ্ধার করে। ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করে কিন্তু পুলিশ তেমনকোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পুলিশ এসে কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ক্ষান্ত হয়।
শাহবাগ মোড় থেকে বাটা সিগন্যাল রিকশায় চড়ে রাতে যাওয়ার সময় ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে সুমি নামে ঢাবির এক ছাত্রী। আচমকা বুঝে উঠার আগেই কেউ একজন রানিং রিকশার মধ্যে তার হাত থেকে ছোঁ মেরে মোবাইল নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে শাহবাগ থানায় গিয়ে অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত তার মোবাইল ফেরত পাননি।
খোকন নামে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা এক তরুণ গত দুই দিন আগে অফিস থেকে বাসা যাওয়ার সময় হাতিরঝিল এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। একদল বখাটে ছেলে ধারালো অস্ত্রের মুখে তার স্মার্টফোন ছিনিয়ে নেয় এবং ঘটনার সময় ধস্তাধস্তির এক সময় অস্ত্রের আঘাতে তার হাত থেকে রক্ত বের হলেও আশপাশের কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন নি।
রাজধানীতে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান- তুরাগ হাউজিং এলাকা, শাহবাগ হয়ে বাটা সিগন্যাল ছাড়াও গুলিস্তান থেকে সদরঘাট বিশেষ করে জনসন রোড হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক, শহীদ মিনার,হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাই মামলা হয়েছে ৭৮টি। ২০১৯ সালে ১১৯টি। আর ২০২০ সালে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬টি। তবে ভুক্তভোগীদের মতে, ছিনতাইয়ের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। ঢাকার সিএমএম আদালতের জিআর খাতার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১০ বছরে শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ ১৫টি থানা এলাকায় ছিনতাই হয় অপেক্ষাকৃত বেশি।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন খাতার তথ্যে দেখা গেছে, গত আট বছরে ঢাকা মহানগর এলাকায় ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ৮৪৬টি। এ সময় ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হয়েছেন মোট ৩৬ জন। ২০১৮ সালে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা হয় ৭৮টি। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ১১৯টি।
অপরদিকে ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ কি ভূমিকা পালন করছে এবং ভুক্তভোগীরা উপকার কতটুকু পাচ্ছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা যাতে তাৎক্ষণিক প্রসাশনের সাহায্য নেয়,সে জন্য পুলিশের চেষ্টার কোন কমতি নেই।
যাদের বিরুদ্ধে একাধিক ছিনতাইয়ের মামলা আছে,বিশেষ করে যারা এই ধরনের অপরাধ আগেও করছে তাদের প্রতি আমরা ইনফর্মারদের দ্বারা নজরে রাখি। প্রতিটি থানায় চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের ছবি সহ তাদের নামে ফাইল আছে। রাস্তায় আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেলেও অনেক ঘটনায় পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও টাকা উদ্ধার করেছে। তবে ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ভুক্তভোগী মামলা না করায় পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের সহজে শনাক্ত করতে পারে না বলেও জানান তিনি।
চিহ্নিত জায়গা গুলোতে ছিনতাই রোধে র্যাব কি কাজ করছে? জানতে চাওয়া হলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ. ন. ম. ইমরান খান উল্লেখ করে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের স্বাধীন চলাফেরায় নিরাপত্তা দিতে র্যাব আগের চেয়ে অনেক জোড়ালোভাবে কাজ করে। অভিযোগ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নজরদারি আছে। নিয়মিত টহল দেওয়া হয়ে থাকে চিহ্নিত পয়েন্ট গুলোতে। ছিনতাই রোধ করতে মাঝে মাঝে বিশেষভাবে অভিযানও চালানো হয়।
ছিনতাইয়ের স্বীকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাস্তায় যেভাবেই যাতায়াত করুন না কেন যথেষ্ট সচেতন থাকার পরেও অনেক মানুষকে নিয়মিত এ ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিছু জায়গা আছে যেখানে ছিনতাইয়ের স্পট হিসেবে মানা হচ্ছে কিন্তু ঐ সব জায়গায় যথাযথ পুলিশী টহল বাড়ানো হচ্ছে না। অনেক জায়গায় এখনো সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয় নি। এছাড়া তাৎক্ষণিক সুফল পাওয়া যায় না বলে ভুক্তভোগীরা বেশির ভাগই আইনের আশ্রয় নেন না।
ভুক্তভোগীদের দাবি, পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারী জোরদার করতে চিহ্নিত স্পট গুলোতে এলাকাভিত্তিক সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো হোক। এতে ছিনতাইকারী শনাক্ত করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেয়া সহজ হবে বলে মনে করেন তারা।
আরও পড়ুন:
ছিনতাই : প্রথম আলো
বাংলাদেশের খবর সাইটটি ব্যবহার করায় আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি দেখুন, যোগাযোগের বিস্তারিত দেয়া আছে।
Comments are closed.