শহীদ ধীরেন্দ্রনাথের নামে ভাষা জাদুঘর স্থাপনের দাবি কুমিল্লাবাসীর

ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে অযতন-অবহেলায় পড়ে আছে।  এতে করে ভাষা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথের নামে ভাষা জাদুঘর স্থাপনের দাবি কুমিল্লাবাসীর

ভাষা জাদুঘর স্থাপন:তাই আগামী প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দিতে সরকারিভাবে বাড়িটি সংস্কার করে ভাষা জাদুঘর কারার উদ্যোগ গ্রহণের প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

জানা যায়, ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের  তৎকালীন রাজধানী করাচিতে গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি ওই অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে সোচ্চার হন তিনি অধিবেশনে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গণপরিষদে যে কার্যবিবরণী লেখা হয় তা ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়। সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথের নামে ভাষা জাদুঘর স্থাপনের দাবি কুমিল্লাবাসীর

অধিবেশনে ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবি তোলেন তিনি। তখনকার পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এতে ক্ষিপ্ত হন। এতে ধীরেন্দ্রনাথ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রোষাণলে পড়ে কয়েকবার কারাবরণ করেন।

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য আগে থেকেই টার্গেট হয়ে ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ। আর সে কারণেই ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ের এ বাড়ি থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় কুমিল্লা সেনানিবাসে।

সেখানে ৮৫ বছর বয়স্ক এ দেশপ্রেমিক রাজনীতিককে নির্যাতন চালায়। পরে বাবা-ছেলে দুজনকেই হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে তাদের মরদেহের সন্ধানও পায়নি পরিবার।

এরপর থেকে এ বাড়ির অবকাঠামো ক্রমেই ভেঙে পড়তে থাকে। এ বাড়ি দেখে এখন আর বোঝার উপায় নেই, এখানে একসময় অবিভক্ত পাকিস্তানের এক প্রথিতযশা বর্ষীয়ান রাজনীতিক বসবাস করতেন।

ইতিহাসবিদ, গবেষক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আহসানুল কবির বলেন, ধীরেন্দ্রনাথের বাড়িটি শুধু কুমিল্লাবাসী না, এটি সারাদেশের মানুষের অহঙ্কারের জায়গা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় আজ বাড়িটি জীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথের নামে ভাষা জাদুঘর স্থাপনের দাবি কুমিল্লাবাসীর

বাড়িটিকে কেন্দ্র করে আরও আগেই অনেক কিছু হতে পারতো। কেন হয়নি এটি না ভেবে, এখনই রাষ্ট্রীয় ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

কুমিল্লাবাসীর পক্ষে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়িটি সংস্করণে যদি আইনগত কোনো বাধা না থাকে প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করে এখানে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে একটি ভাষা জাদুঘর  করা হোক। যেটি দেখে শত শত বছর বাংলা ভাষা-ভাষির মানুষ অনুপ্রাণিত হবে। যা নিয়ে কুমিল্লার মানুষ অহঙ্কার করতে পারে।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতিরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নাজমুল বারী চৌধুরী বলেন, বাংলা ভাষার প্রস্তাবক ও ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতি রক্ষার জন্য ভাষা জাদুঘর আমরা কাজ করছি।

জেলা প্রাশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছি। আশা করছি অচিরেই বাড়িটি সংস্কার করে আগামী প্রজন্মের জন্য ইতিহাস রক্ষায় ধীরেন্দ্রনাথের নামে একটি ভাষা জাদুঘর স্থাপন করা হবে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ইতোপূর্বে আমরা ২২ লাখ টাকা খরচ করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে স্টেডিয়ামের মূল গেটটি নির্মাণ করেছি।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথের নামে ভাষা জাদুঘর স্থাপনের দাবি কুমিল্লাবাসীর

ধীরেন্দ্রনাথ পরিবারের লোকজন বাড়িটি সংস্কারের দাবি তুললে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় দ্রুত সেটা করে দেবে। যেমনভাবে কুমিল্লায় শচীন দেববর্মণের বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে।

আরও দেখুনঃ

নাটোরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা

জাদুঘর