রংপুরের বদরগঞ্জে শহীদ লে. কর্ণেল কাদিরের স্মৃুতিসৌধ উদ্বোধন

রংপুরের বদরগঞ্জে শহীদ লে. কর্ণেল কাদিরের স্মৃুতিসৌধ উদ্বোধন , রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার মোস্তফাপুর বকসীপাড়া গ্রামে আজ শনিবার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ আব্দুল কাদির ও স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে নবনির্মিত স্মৃুতিসৌধ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাদিরের জ্যেষ্ঠপুত্র ও রক্তধারা’ ৭১-এর সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক নাদিম কাদির নিজ উদ্যোগে চিকলি নদীর তীরে নিজ গ্রামে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ফিতা কেটে এবং বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য আরোমা দত্ত।

রংপুরের বদরগঞ্জে শহীদ লে. কর্ণেল কাদিরের স্মৃুতিসৌধ উদ্বোধন

 

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের উত্তরসূরীদের সংগঠন রক্তধারা’ ৭১-এর সভাপতি সাংবাদিক নাদিম কাদির উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রক্তধারা’ ৭১ এর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান তালুকদার।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ব্রিগেডিয়াার জেনারেল মো. বায়েজিদ সারোয়ার, স্মৃতিসৌধের স্থপতি ফুয়াদ হায়দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব রহমান হাবলু, শহীদ লে. কাদির পরিবারের সদস্য সালেক মিয়া, বদরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী সুইট, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিণী রওশন আরা, শহীদ মুক্তিযেদ্ধা সন্তান দীপ্তি ঘোষ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

রংপুরের বদরগঞ্জে শহীদ লে. কর্ণেল কাদিরের স্মৃুতিসৌধ উদ্বোধন

নাদিম বলেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাদির তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র বাঙালি অফিসার ছিলেন এবং তিনি ১৯৭০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে তেল ও গ্যাস উন্নয়ন কর্পোরেশনে যোগদান করেন। চট্টগ্রামে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি গোপনে বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম, আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা এবং কয়েকজন জুনিয়র বাঙালি সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করার ঠিক আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাদির তার অফিসে মজুদ বিস্ফোরক স্বাধীনতাকামী জনগণকে সরবরাহ করেছিলেন।

সেই বিস্ফোরক ব্যবহার করে স্বাধীনতাকামী জনতা ফেনীর শুভপুর সেতু উড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাদের প্রবেশ বিলম্বিত করে দেন। পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাদির পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অন্যদের সাথে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় যান। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাদির তার গর্ভবতী স্ত্রীকে দেখতে চট্টগ্রামে আসেন যখন পাকিস Íানি সেনাবাহিনী তাকে তার বাসভবন থেকে আটক করে নিয়ে যায়।  ‘আমি ব্রিগেডিয়াার জেনারেল মো. বায়েজিদ সারওয়ারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে আমাদের চট্টগ্রামের বাসভবনের নিকটবর্তী স্থান থেকে লে. কর্নেল কাদিরের কবর না পাওয়া পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ ছিলেন,’ নাদিম বলেন।

রংপুরের বদরগঞ্জে শহীদ লে. কর্ণেল কাদিরের স্মৃুতিসৌধ উদ্বোধন

পরে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে নাটোরে শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাদিরের নামে নামকরণকৃত কাদিরাবাদ সেনানিবাসে মরদেহের পুনঃদাফন করা হয়। এমপি ডিউক বলেন, শিগগিরই নিজ গ্রাম মোস্তফাপুরে চিকলি নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির নামকরণ করা হবে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মদ আবদুল কাদিরের নামে। তিনি বলেন, এদেশের শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সেতু ও সড়কের নামকরণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করা হবে।

অরোমা দত্ত স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে স্থানী ও সারাদেশের মানুষকে উপহার হিসেবে দেয়ার জন্য নাদিম কাদিরকে ধন্যবাদ জানান। স্মৃতিসৌধটি তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রকৃত জাতীয় ইতিহাস জানা ও লালন করার সুযোগ করে দেবে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার ও অস্তিত্ব। দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

আরও দেখুনঃ

লিঙ্গ সমতার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

রংপুর