রক্তস্বল্পতা লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার ,বাংলাদেশের অধিকাংশ শিশু সহ নারী, পুরুষ রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। রক্তস্বল্পতা এর অন্যতম কারণ আয়রণের অভাব। রক্ত মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর একটি। যা দেহের সকল অংশে অক্সিজেন এবং সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বয়ে নিয়ে যায়। দেহে রক্তের কোনো উপাদান কম থাকলে সুস্থভাবে বাঁচা সম্ভব নয়। রক্তের উপাদানগুলো হচ্ছে লাল ও সাদা রক্তকণিকা এবং প্লাটিলে’ট। লাল রক্তের কোষে আছে হিমোগ্লোবিন যা রক্ত উৎপাদন করে।
হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ হলো হৃদপিণ্ড থেকে দেহের সব অঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করা। হিমোগ্লোবিন দেহকোষ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও সংগ্রহ করে এবং তা পুনরায় ফুসফুসের কাছে পৌঁছে দেয় যাতে তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহ থেকে বের হয়ে যেতে পারে। রক্ত স্বল্পতা বা রক্ত শূন্যতা বা অ্যানিমিয়া মানে রক্ত কমে যাওয়া নয়। আমাদের শরীরের হিমোগেবিনের পরিমাণ কমে গেলেই দেহে রক্ত শূন্যতা বা রক্ত স্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) বলা হয়।
Table of Contents
রক্তস্বল্পতা লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার
রক্ত স্বল্পতার লক্ষণ-
- রক্ত স্বল্পতার কারণে মানুষ অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠেন। ক্লান্তির পরিমাণ বেশি লক্ষণ করা যায়।
- মানুষের ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
- শরীরের আয়রনের অভাব রক্ত স্বল্পতার কারণ।
- রক্ত স্বল্পতায় বিষণ্ণতার অন্যতম কারণ। যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে তাদের অতরিক্ত দুর্বলতা এবং মাথাব্যথা হওয়ার কারণে তাদেরকে বিষণ্ণতায় গ্রাস করে।
- রক্ত স্বল্পতার লক্ষণ হচ্ছে হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া।
কেন হয় রক্তস্বল্পতা—
- শরীরে পুষ্টি ,আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি।
- অতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ খাওয়ার করণেও রক্তাল্পতায় হয়।
- জন্মগত রোগে সহ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তরা রক্তাল্পতায় ভোগেন।
- আলসারের কারণে ক্রমাগত বমি বা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ হওয়া। অর্শরোগে (পাইলস) রোগীর অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণেও রক্তাল্পতা হতে পারে।
সুতরাং রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে দেহ অক্সিজেনের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে রক্তস্বল্পতা মতো রোগও হয়। আর এ থেকে বাঁচার উপায় হলো হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এমন কিছু খাবার খাওয়া।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় যে সকল খাবার
মাংস

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রাণিজ প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস; যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর একটি। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য জরুরি। মুরগির মাংস থেকেও দেহ আয়রন সরবরাহ করে।
ফল

সাইট্রাসযুক্ত ফল, যেমন, আম, লেবু এবং কমলা ভিটামিন সি-র সবচেয়ে ভালো উৎস। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে জরুরি। এর ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় । তরমুজ, বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।
সামুদ্রিক খাদ্য
সামুদ্রিক খাদ্যে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। সুতরাং অ্যানেমিয়া বা রক্তশুন্যতার রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অয়েস্টার, ক্লামস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক খাদ্য রাখতে হবে।
কলাই বা শুটিজাতীয় খাদ্য

সয়াবিন, ছোলা এবং বিনজাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সয়াবিন বর্তমানে সবজিভোজীদের জনপ্রিয় একটি খাদ্য। এ থেকে সুস্বাদু সব খাবার তৈরি হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় দ্রুতগতিতে।
পুর্ণশস্যজাতীয় খাদ্য
চাল, গম, বার্লি এবং ওটস রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চমৎকার আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেটসও সরবরাহ করে। লাল চাল বিশেষ করে সব বয়সীদের জন্যই আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস বলে গণ্য হয়।
সবজি
দৈনিক তাজা সবজি খেলে আয়রন ও নানা ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি মিটবে। আলু, ব্রকলি, টমেটো, কুমড়া এবং বিটরুট আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করে।
ডিম
ডিম হলো আরেকটি জনপ্রিয় খাদ্য যাতে আছে উচ্চমাত্রার আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডিমের হলুদ কুসুমে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পুষ্টি এবং ভিটামিন। আর এ কারণেই দুর্বল লোকদেরকে প্রতিদিন সেদ্ধ ডিম খেতে বলা হয়।
শুকনো ফল

কিসমিস, অ্যাপ্রিকট বা খুবানি এবং খেজুরে আছে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন এবং আঁশ। এসব খাবার খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বাড়ে দ্রুতগতিতে।
বাদাম
যে কোনো ধরনের বাদামই মানবদেহের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়। যে কারণে তরুণদেরকে কাজু বাদাম, হিজলি বাদাম, চীনা বাদাম এবং আখরোট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে দ্রুতগতিতে।
ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকোলেটেও থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
এই সবগুলো খাদ্যই দেহে আয়রনের ঘাটতি মিটিয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ায়। সুতরাং নিয়মিতভাবে এই খাবারগুলো খেয়ে দেহে রক্তের পরিমাণ, জীবনী শক্তি এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে থাকুন।
তবে মনে রাখবেন সবজি সারারাত ফ্রিজে রাখলে আয়রণের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যায়। আয়রণ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পর চা বা কফি খাবেন না। চা বা কফিতে যে ট্যানিন নামক উপাদান থাকে তা রক্তে আয়রণ শোষণের মাত্রা কমিয়ে দেয়। গর্ভবতী মাকে গভধারণের ৩/৪ মাস থেকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং আয়রণ টেবলেট ৬০ গ্রাম এবং ৫০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড খাওয়া উচিত।
আরও দেখুন:
- বাংলাদেশের খবরঃ মশার হাত থেকে বাঁচার ঘরোয়া উপায়!
দেহে রক্তস্বল্পতা বেশি দেখা দিলে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোন অবস্থায়ই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ঔষধ গ্রহণ করা যাবে না। নিজে নিজে কোন ট্যাবলেট বা সিরাপ গ্রহণ করবেন না। আপনার শরীরের জন্য কোন ঔষধ প্রয়োজন তা চিকিৎসকই বুঝে দিবেন।
রক্তস্বল্পতা সম্পর্কে আরও জানতে:
- উইকিপিডিয়া: রক্তশূন্যতা
- প্রথম আলো: রক্তশূন্যতা কীভাবে বুঝবেন
বাংলাদেশের খবর সাইটটি ব্যবহার করায় আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি দেখুন, যোগাযোগের বিস্তারিত দেয়া আছে।
Comments are closed.