শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা – কাজী কাদের নেওয়াজ

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা – কবিতাটি বিখ্যাত কবি “কাজী কাদের নেওয়াজ” এর কবিতা। শিক্ষকের মর্যাদা যে অপরাপর সবার উপরে তা মূলমতি শিশুদের কাছে তুলে ধরাই এই কবিতার মুল উদ্দেশ্য।

 

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা – কাজী কাদের নেওয়াজ
শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা – কাজী কাদের নেওয়াজ

 

কাজী কাদের নেওয়াজ (১৫ জানুয়ারি, ১৯০৯ – ৩ জানুয়ারি, ১৯৮৩) একজন বিশিষ্ট কবি। প্রেম ও পল্লীর শ্যামল প্রকৃতি তার কবিতায় মনোজ্ঞভাবে প্রকাশিত। তিনি শিশুতোষ সাহিত্যেও খ্যাতিমান ছিলেন। ‘মরাল’ তার বহুল সমাদৃত কাব্যগ্রন্থ এবং ‘দাদুর বৈঠক’ তার একখানি সুপরিচিত শিশুরঞ্জক গদ্যরচনা। ‘নীল কুমুদী’ তার আরেকটি কাব্যগ্রন্থ এবং ‘দুটি তীরে’ একটি উপন্যাস।

কাদের নেওয়াজ মুর্শিদাবাদ জেলার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে। তিনি কর্মজীবনে মূলত ছিলেন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি স্থানীয় মাখরুন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ সালে এন্ট্রান্স এবং বহরমপুর কলেজ থেকে ১৯২৯ সালে ইংরেজিতে অনার্স পাস করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ ত্যাগ করে ঢাকায় আসেন এবং নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কর্মে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে দিনাজপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৬-তে এই পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অতপর মাগুরা জেলার মুজদিয়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন

 

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা – কাজী কাদের নেওয়াজ

 

বাদশাহ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্ সঞ্চারি অঙ্গুলি।

শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝি তার সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন্ কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।

হঠাৎ কি ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন্ ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ্ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।

যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।
তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যবে
শিক্ষকে ডাকি বাদশা কহেন, ”শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা”
শিক্ষক কন-”জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হায়,
কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?”
বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”

উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
”আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।”

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা – কাজী কাদের নেওয়াজ
শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা – কাজী কাদের নেওয়াজ

 

 

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা এর মুলভাব ঃ

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতায় শিক্ষকের মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কতিায় শিক্ষক একজন সাধারণ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বাদশাহ আলমগীরের ছেলের দ্বারা পায়ে পানি ঢেলে নিয়েছিলেন। কিন্তু বাদশাহ আলমগীর এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। বাদশাহ আলমগীর প্রত্যাশা করেছিলেন তাঁর সন্তান পানি ঢেলে নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধুয়ে দেবেন। তবেই না তাঁর সন্তান নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম নিয়ে দেশের একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। বাদশাহ আলমগীর উপলব্ধি করেছিলেন, যে ছাত্র শিক্ষকের সেবা করতে জানে না, সে কখনো পরিবার, সমাজ ও দেশের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।

‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতার মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, শিক্ষা হলো একটি জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষক হলেন কাণ্ডারি। প্রতিটি সমাজ ও দেশের জন্য শিক্ষকের অবদান অপরিসীম। তাই সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে।

কাজী কাদের নেওয়াজ শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা – কাজী কাদের নেওয়াজ

 

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতা আবৃত্তি ঃ

 

 

আরও দেখুনঃ

Comments are closed.