মাল্টিটাস্কিং আপনার কর্মদক্ষতা বাড়ায়, না কমায়? , মাল্টিটাস্কিং: একই সময়ে একাধিক কাজ চালিয়ে যাওয়াকে বোঝায়। বর্তমান সময়ে, যে যত বেশি মাল্টি টাস্কিং করতে পারে, ধরে নেওয়া হয় সে ততবেশি চৌকস ও দক্ষ।
একই সময়ে অনেক কাজ করা হচ্ছে, তার মানে অল্প সময়ে বেশি কাজ হচ্ছে’ গোছের একটা ভাবনা চলে আসে। বর্তমান সময়ে একজন সফল মানুষের কথা বললেই আমাদের চোখের সামনে এমন একটা মানুষের ছবি ভেসে ওঠে, যে একই সময়ে অনেকগুলো কাজ একাই সমানতালে করে চলেছে।
গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং করে যাওয়া, টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া, একইসঙ্গে একাধিক ফোনে কথা চালিয়ে যাওয়া, সর্বোপরি একটা কাজের সাথে মিলিয়ে আরও একাধিক কাজ চালিয়ে যাওয়া।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। গবেষকদের মতে, এই যে আমাদেরে একই সময়ে একাধিক কাজ করা- এটা আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো তো দূরে থাক, বরং প্রোডাক্টিভিটি উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়, মনোযোগ হারিয়ে যায়, সেই সাথে কাজে ভুলের মাত্রা বেড়ে যায়।
Table of Contents
মাল্টিটাস্কিং আপনার কর্মদক্ষতা বাড়ায়, না কমায়?
কোনটা মাল্টিটাস্কিং, কোনটা নয়

এটা ঠিক ততটা ভালো নয়, যতটা আমরা ভাবি। এই বিষয়টি বোঝার আগে আমাদের বোঝা প্রয়োজন- কোনটাকে ঠিক ‘মাল্টিটাস্কিং’ বলা হচ্ছে।
কেউ চাইলে তার সারাদিনের সময়কে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে একাধিক কাজে যুক্ত থাকতে পারে, সেটা মাল্টি-টাস্কিং নয়। একজন ব্যক্তি একইসাথে চাকরি আর পড়াশোনা চালাচ্ছে কিংবা এক ব্যক্তি একইসাথে সন্তান, সংসার, পড়াশোনা সামলাচ্ছে, কিংবা চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হচ্ছেন- এগুলো মাল্টিটাস্কিংয়ের উদাহরণ নয়।
একই সময়ে একাধিক কাজ করতে যাওয়া, নিজের বর্তমান মনোযোগকে একটা কাজে স্থির না রেখে বহুদিকে বিক্ষিপ্ত করে দেওয়া। মাল্টিটাস্কিং কিন্তু নতুন কোনো ধারণা নয়, এক কাজের সাথে মিলিয়ে আরেক কাজ করার প্রচলন তো অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এসে এ ধারণা প্রচণ্ড ব্যাপকতা লাভ করেছে। বর্তমান যুগে তথ্যবহুলতার ভালোর পাশাপাশি মন্দ দিকটা হলো- তথ্যবহুলতা আমাদের একাগ্রতা ব্যহত করে। আমাদের ‘অ্যাটেনশন স্প্যান’ এখন এমনিতেই অনেক কমে গেছে। তার মধ্যে যদি আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে মাল্টিটাস্কিংয়ের বাড়তি পরিশ্রম করাই, তাহলে তার কাজ করার ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কমে আসবে।
প্রোডাক্টিভিটির ওপর প্রভাব কতটুকু?
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ নিয়ে বসেছেন কম্পিউটারে। ব্রাউজারে খোলা আছে আপনার মেইল, অনলাইন পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব ইত্যাদি। এখানেই শেষ নয়। পাশেই আছে আপনার স্মার্টফোনটা তাতেও টুংটাং ম্যাসেজ আর নোটিফিকেশনের আওয়াজ আসছে । এরকম অবস্থায় ঠিক কতটুকু মনোযোগ দিয়ে আপনার কাজটা করা সম্ভব?
এই মূহুতে কোন প্রয়োজন নেই সোশ্যাল মিডিয়ার সব বন্ধ করে নিজে কাজ টা করতে থাকুন। সাম্প্রতিক ভাইরাল খবরটা আপনার কতটুকু উপকার করবে যানিনা অপকারটা বেশি করবে।
তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকেও আমাদের চোখের সামনে রেখে আমরা আমাদের মনোযোগকে কয়েক জায়গায় ভাগ করে দিয়েছিলাম। নিজের অজান্তেই মনোযোগ চলে যাচ্ছে অন্য ট্যাবগুলো কিংবা পাশের স্মার্টফোনের দিকে। ফলে মূল যে কাজটা তখন আমাদের করার কথা, স্বাভাবিকভাবেই সে কাজে পূর্ণ মনোযোগটা চাইলেও আমরা তখন আর দিতে পারি না।
আরও দেখুন:
- বাংলাদেশের খবর: ইলন মাস্ক এর সম্পদের পরিমাণ গেটস-বাফেটের সমান
আপনার মনে হতে পারে, সমস্যাটা কোথায়? আমি মাল্টিটাসকার আমার ‘মনোযোগ’ আমি আমার ইচ্ছামতো ভাগ করতেই পারি।
গবেষকরা বলেন, সমস্যাটা এখানেই। এমআইটির অধ্যাপক আর্ল মিলারের মতে, মানুষ একবারে একটা জিনিসেই মনোযোগ দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক গবেষণা এ-ও বলে, মাল্টিটাস্কিংই আমাদের কর্মদক্ষতাকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
আমরা মূলত মাল্টিটাস্কিংয়ের নামে যা করি, তা মূলত এক কাজ থেকে অন্য কাজে খুব দ্রুত ‘সুইচ’ করে যাই। একে বলা চলে ‘টাস্ক সুইচিং‘। এভাবে দ্রুতগতিতে এক কাজ থেকে অন্য কাজে বারবার চলে যাবার ফলে কোনো কাজেই পূর্ণ মনোসংযোগ ধরে রাখা যায় না। ফলে কোনো কাজই পূর্ণ মনোযোগের সাথে সুসম্পন্ন করা যায় না। উপরন্তু, আমাদের মস্তিষ্কও এতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
মনোসংযোগ আর একাগ্রতাই মূল
যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রেই পূর্ণ সুফল পেতে হলে অন্যতম পূর্বশর্ত হলো একাগ্রতা আর মনোসংযোগ। আর এই মনোসংযোগকে ধরে রাখতে চাইলে একবারে একটা কাজেই মনোযোগ দিতে হবে। সেজন্য অবশ্যই মাল্টিটাস্কিং এড়িয়ে যেতে হবে।
মনোবিজ্ঞানীরা বর্তমানে মাইন্ডফুলনেস তথা মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে জোর দেয়ার কথা বলছেন। অর্থাৎ, আমাদের যাপিত জীবনের কাজগুলো যদি আমরা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করি, তাহলেই জীবনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধন সম্ভব।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে খাওয়ার সময়েও মোবাইল চেক করা, ফোনে কথা বলা বা টিভি দেখার মতো কাজ করতে থাকি। কিন্তু, অভ্যাস পরিবর্তন করে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’-এর চর্চা করলে, অর্থাৎ মনোযোগের সাথে নিজের খাবারটা খেলেই বদহজম, অতিরিক্ত খাওয়ার মতো বিষয়গুলো এড়ানো যায়।
আর আপাতদৃষ্টিতে খাওয়ার মতো একটা সাধারণ কাজে যদি মনোযোগ দেয়াটা যদি এতটাই জরুরি হয়, তাহলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে মনোসংযোগ যে কতখানি প্রয়োজন, তা বলাই বাহুল্য। আর একই সময়ে একাধিক কাজ করলে একাগ্রতার জায়গাটাই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
মাল্টিটাস্কিং কি তবে একেবারেই পরিত্যাজ্য?
আমাদের বর্তমান ব্যস্ত জীবনে চাইলেও মাল্টিটাস্কিংকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। দৈনন্দিন অতি ক্ষুদ্র কাজগুলো একটা একটা করে করার জন্য যে বাড়তি সময় দরকার, সেটা হয়তো অনেকের জন্যই বিলাসিতা। তাই কাজের গুরুত্ব বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- মাল্টিটাস্ককার হবেন কিনা।
যেমন, কানে হেডফোন লাগিয়ে আপনি ঘরের টুকটাক গোছানোর কাজ করতেই পারেন, তাতে হয়তো কোনো বিরূপ প্রভাব কাজের উপর পড়বে না। কিন্তু যখন আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন, তখন মোবাইলে কথা বলা বা টেক্সট করার মতো ‘চৌকসতা’ না দেখানোই ভালো। কিংবা কর্মক্ষেত্রে জরুরি কোনো কাজ বা সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় নিজের মনোযোগকে সেই কাজে একীভূত না করে নিলে, কাজে বা সিদ্ধান্তগ্রহণে ভুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে, যার ফলাফল সুদূরপ্রসারী।
পরিশেষে
পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সব কাজ করাটা হয়তো সবসময় সবার জন্য সম্ভব হয় না। কিন্তু একটা কথা আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষের পক্ষে একদফায় একদিকেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব। মানবমস্তিষ্কের এই সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিতে পারলে কাজটা অনেকাংশেই সহজ হয়ে যায়। একবার মাল্টি টাস্কিং বন্ধ করে একবারে একটা কাজে মনোযোগ দিয়ে দেখুন, আপনার মস্তিষ্কই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। যে মস্তিষ্ককে রোজ এতটা খাটাতে হয়, তার জন্য এটুকু উপকার তো করতেই পারেন।
মাল্টিটাস্কিং সম্পর্কে আরও জানতে:
- বাংলাদেশ প্রতিদিন: মাল্টিটাস্কিং কি এবং কেন?
বাংলাদেশের খবর সাইটটি ব্যবহার করায় আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি দেখুন, যোগাযোগের বিস্তারিত দেয়া আছে।
আরও পড়ুন:
Essay Writing for SSC, HSC, BCS, Bank Exam & Other Competitive Exams
Comments are closed.